Tuesday, May 7, 2024

আজ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন কবিকে শান্তি দিয়েছিল যে নৌকাঘর


 কবিগুরুর নদীপথে চলার সাথি পদ্মা বোট। শিলাইদহ কুঠিবাড়ির দেয়ালে টানানো রয়েছে ছবিটি। সেখান থেকে ছবিটি তোলাছবি: তৌহিদি হাসান।

তৎকালীন পূর্ববঙ্গে জমিদারি ছিল ঠাকুর পরিবারের। কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও নওগাঁর পতিসর—এই তিন জায়গায় জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব পেয়েছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কীর্তিমান কনিষ্ঠ পুত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বয়স তখন তাঁর ২৮ বছর, বিয়ে করেছেন বছর ছয়েক আগে। সাল-মাসের হিসাবে সেটি ১৮৮৯ সালের নভেম্বর। শুরু হলো বিলাতফেরত যুবকের পেশাগত জীবন। তত দিনে লেখালেখি করে নামও কুড়িয়েছেন বেশ।

তখনকার দিনে সড়ক যোগাযোগের কোনো শ্রী ছিল না। রেলগাড়ি ঝমাঝম আসেনি এ দেশে। নদীপথই ছিল যোগাযোগের প্রধান অবলম্বন। জমিদারির কাজে রবীন্দ্রনাথকে আজ শিলাইদহ তো সপ্তাহখানেক পরে শাহজাদপুর, তার পরের সপ্তাহে হয়তো পতিসর যেতে হয়েছে। ১৯০১ সাল অবধি মোট ১২টি বছর পূর্ববঙ্গে জমিদারি করেছেন তিনি। কীভাবে যেতেন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়? আজ পঁচিশে বৈশাখ কবির জন্মদিনে বিভিন্ন বইপত্র থেকে একটি-দুটি বাক্য কুড়িয়ে জোড়া দিয়ে বানানো যাক সে গল্পের শরীর!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১–১৯৪১)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১–১৯৪১)

রবীন্দ্রনাথের একটি বজরা ছিল। কবি বলতেন বোট। বাংলার প্রমত্ত পদ্মা নদীকে ভালোবাসতেন বলে তিনি এর নাম দিয়েছিলেন পদ্মা। ঢাকার কারিগর দিয়ে এই বজরা বানিয়েছিলেন তাঁর পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর। ভেতরে ছিল দুটি বড় কক্ষ, খাবার ঘর, সঙ্গে আরও দুটি ছোট কক্ষ। অনেক সাধ করে বজরাটি বানালেও ভোগ করে যেতে পারেননি দ্বারকানাথ। উত্তরাধিকার সূত্রে বজরাটির মালিক হলেন পুত্র দেবেন্দ্রনাথ। তাঁর খুব পছন্দের ছিল জলযানটি। রবীন্দ্রনাথসহ তিন পুত্রকে নিয়ে একবার পদ্মায় বেড়াতেও এসেছিলেন। অবশেষে রবীন্দ্রনাথের হাতে পূর্ববঙ্গের জমিদারিকাজের দায়িত্ব আসায় এই বজরার মালিকানাও এল তাঁর হাতে।

বেশ আয়েশের সঙ্গে বজরাটি ব্যবহার করতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আহার-নিদ্রা সবকিছুরই ব্যবস্থা ছিল এতে। পরিবার-বন্ধুবান্ধব নিয়ে বিহারেও যেতেন এই নৌযানে চড়ে। কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘হাউজবোটে (বজরা) ঢুকে গেলেই সবকিছু বাড়ির মতো। এর ভেতরকার চমৎকার কারুকাজ আর পারিবারিক পরিবেশে আমি স্বস্তি বোধ করতাম। হাউজবোট পদ্মা বাবার যথেষ্ট কাজে লেগেছে। পৃথিবী যখন তার শান্তি কেড়ে নিয়েছে, তখন তাকে আশ্রয় ও শান্তি দিয়েছে।’ (আমার বাবা রবীন্দ্রনাথ, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

রবীন্দ্রনাথের আরেকটি বজরার কথা পাওয়া যায় ছোট মেয়ে মীরা দেবীর লেখায়। সেই বজরার নাম ছিল আত্রাই। স্মৃতিকথা বইয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ও নাটোরের মহারাজা জগদীন্দ্রনাথ রায় প্রায়ই শিলাইদহে যেতেন। তাঁরা পদ্মার ওপর বজরায় থাকতে খুব ভালোবাসতেন। আমাদের দুটি বজরা ছিল। তাই তাঁরা গেলে কোনো অসুবিধা হতো না। একটি বজরার নাম আগেই উল্লেখ করেছি, অপরটির নাম ছিল “আত্রাই”। আমাদের আরেকটি পরগনাতে আত্রাই নদী ছিল, তার থেকে আত্রাই নামকরণ হয়েছিল।’

বজরায় চড়ে বাংলার নদীপথে ঘোরাঘুরি করেছেন কবি। কবির গান, কবিতা ও গল্পে বারবার এসেছে পালতোলা নৌকার কথা, ধানে বোঝাই নৌকা, পল্লির কুলবধূর লজ্জা মেশানো হাসি, নদীর ঘাটে স্নানরত নারী, মাঝিদের হাঁকডাক। ‘ছিন্নপত্র’-এর তৃতীয় চিঠিতে কবি লিখেছেন, ‘শিলাইদহের অপর পারে একটা চরের সামনে আমাদের বোট লাগানো আছে। প্রকাণ্ড চর-ধু ধু করছে—কোথাও শেষ দেখা যায় না—কেবল মাঝে মাঝে এক এক জায়গায় নদীর রেখা দেখা যায়।’

রবীন্দ্রনাথ কত যে কবিতা ও গান লিখেছেন এই বজরায় চড়ে। শিলাইদহে বোটে বসে লিখেছিলেন ‘সোনার তরী’। তখন ফাল্গুন মাস, কবি লিখলেন, ‘গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা’। কবি ও প্রাবন্ধিক আবুল মোমেন লিখেছেন, ‘স্থান ও পাত্রের কেমন সংযোগ হলে কালের বাস্তবতাকে ছাপিয়ে উঠতে পারে ভাবলোক!’

১৮৯১ সালের ৬ অক্টোবর শিলাইদহ থেকে ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবীকে লেখা চিঠিতেও উঠে এল বোটের কথা, ‘পরশু দিন অমনি বোটের জানলার কাছে চুপ করে বসে আছি, একটা জেলেডিঙিতে একজন মাঝি গান গাইতে গাইতে চলে গেল—খুব যে সুস্বর তা নয়—হঠাৎ মনে পড়ে গেল বহুকাল হল ছেলেবেলায় বাবামশায়ের সঙ্গে বোটে করে পদ্মায় আসছিলুম।—একদিন রাত্তির প্রায় দুটোর সময় ঘুম ভেঙে যেতেই বোটের জানলাটা তুলে ধরে মুখ বাড়িয়ে দেখলুম, নিস্তরঙ্গ নদীর উপরে ফুটফুটে জ্যোৎস্না হয়েছে, একটি ছোট্ট ডিঙিতে একজন ছোকরা একা একলা দাঁড় বেয়ে চলেছে, এমনি মিষ্টি গলায় গান ধরেছে—গান তার পূর্বে তেমন মিষ্টি কখনো শুনিনি। হঠাৎ মনে হল আবার যদি জীবনটা ঠিক সেই দিন থেকে ফিরে পাই!’

বজরাটি কখনো ভাসত তীর থেকে একটু দূরে। তখন ডিঙিনৌকায় এতটুকু পথ গিয়ে তাতে উঠে বসতেন কবি। আবার বজরা থেকে যখন নামতেন, একটি বিশেষ চেয়ারে কবিকে বসিয়ে চারজন পেয়াদা তাঁকে পৌঁছে দিতেন কুঠিবাড়িতে।

একবার পদ্মা বোটে দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন কবি। মরেও যেতে পারতেন। ১৮৯২ সালের জুলাই মাস, সকালবেলা। সেবারও জমিদারির কাজে শিলাইদহে আছেন কবি। ভরা বর্ষা। কবি পদ্মা বোটে সেদিন গোরাই নদীর বুকে। গোরাইয়ের সেদিন ভরা যৌবন। ভরা নদীর সৌন্দর্যে মোহিত কবি। হুহু করে বোট দুলে দুলে চলছে। চলতে চলতেই গোরাই নদীর সেতু দেখা গেল। বোটের মাস্তুল সেতুতে বাধবে কি না, তাই নিয়ে তরজা শুরু হলো মাঝিদের। খেয়াল নেই যে বোট সেতুর কাছে চলে এসেছে। মাঝিদের কোনো বুদ্ধি কাজে লাগল না। দেখা গেল, সেতুতে মাস্তুল বেধে যাচ্ছে এবং সেখানে পানির একটি ঘূর্ণিও আছে।

দেখতে দেখতে বোটটা সেতুর ওপর গিয়ে পড়ল। মাস্তুল মড়মড় করে কাত হতে লাগল। এমন সময় আর একটি নৌকা তাড়াতাড়ি দাঁড় বেয়ে এসে কবিকে তুলে নিল।
পরে বোটে বসেই স্ত্রী মৃণালিনীকে এ ঘটনার কথা লিখেছিলেন কবি, ‘আজ আর একটু হলেই আমার দফা নিকেশ হয়েছিল। তরীর সঙ্গে দেহতরী আর একটু হলেই ডুবেছিল।’

রবীন্দ্রনাথের সেই বজরার অস্তিত্ব এখন আর নেই। তবে এতে ওঠার একটি সিঁড়ি সংরক্ষিত আছে শিলাইদহে কুঠিবাড়ির দোতলায়। রবীন্দ্রনাথের বজরাটি কেমন ছিল, এখনকার প্রজন্মকে সে ধারণা দিতে একটি উদ্যোগ নিয়েছিল প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। তাঁদের তত্ত্বাবধানে ২০১১ সালে শিলাইদহে কুঠিবাড়িতে তৈরি করা হয় ‘হাউস বোট পদ্মা’।

বিআইডব্লিউটিএর নকশায় খুলনার আটজন কারিগর এই বোট তৈরি করেন। চাম্বলের কাঠ দিয়ে নৌকাটি বানাতে খরচ হয় পাঁচ লাখ টাকা।

কুঠিবাড়িতে গেলে দেখা যায়, সেখানকার বকুলতলা পুকুরে ভাসছে পরিত্যক্ত বজরাটি।

বয়স ১৯, ‘স্পাইডারম্যানের’ মতো দেয়াল বেয়ে করেন চুরি


 বয়স মাত্র ১৯। এই বয়সেই দুটি ‘দক্ষতা’ অর্জন করেছেন তিনি। একটি হচ্ছে দুই পা দিয়ে ছোঁয়া যায় পাশাপাশি থাকা এমন দুটি ভবনের দেয়াল বেয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে ওপরে ওঠা। এভাবে মাকড়সার (স্পাইডারম্যান) মতো দেয়াল বেয়ে সাততলায় উঠতে সময় নেন কয়েক মিনিট। তাঁর আরেকটি ‘দক্ষতা’ হলো রান্নাঘরের এগজস্ট ফ্যান খুলে ফেলে সামান্য সেই ফাঁকা জায়গা দিয়ে ঘরে ঢোকা এবং নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার নিয়ে একই পথে দিয়ে বের হয়ে আসা।

যাঁর কথা বলা হচ্ছে, তাঁর নাম রোমান আহম্মেদ। তিনি একজন পেশাদার চোর। বিশেষ ওই কৌশল ব্যবহার করে তিনি বাসাবাড়িতে চুরি করেন। থাকেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়ায়। তাঁকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় চনপাড়ার একটি পেশাদার অপরাধীচক্র।

ঢাকার ডেমরার মাতুয়াইলে পাশাপাশি থাকা এই দুটি ভবনের দেয়াল বেয়ে উপরে উঠে একটির সপ্তম তলার ফ্ল্যাটে চুরি করেন রোমান
ঢাকার ডেমরার মাতুয়াইলে পাশাপাশি থাকা এই দুটি ভবনের দেয়াল বেয়ে উপরে উঠে একটির সপ্তম তলার ফ্ল্যাটে চুরি করেন রোমান
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার ডেমরার মাতুয়াইলের একটি বহুতল ভবনের সপ্তম তলার একটি ফাঁকা বাসায় চুরির ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে গত ২৫ এপ্রিল রোমান আহম্মেদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপরই তাঁর অভিনব ‘কৌশল’ ও ‘দক্ষতার’ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারে পুলিশ।

মাতুয়াইলের ওই বাসার বাসিন্দারা ২১ থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত চার দিন ঢাকার বাইরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ২৪ এপ্রিল বাসার তালা খুলে ঘরে ঢুকে তাঁরা দেখেন, আলমারির তালা ভাঙা, ঘরের জিনিসপত্র এলোমেলো। বাসা থেকে ২৫ লাখ টাকাসহ ৩৫ লাখ টাকার মালামাল নেই। অথচ বাসার তালা অক্ষত আছে। কোথাও গ্রিল কাটা নেই। এমনকি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায়ও কাউকে বাসায় ঢুকতে বা বের হতে দেখা যায়নি।

পুলিশের ডেমরা অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) মধুসূদন দাস প্রথম আলোকে বলেন, রোমান কিশোর বয়স থেকেই চুরি করেন। চার-পাঁচ বছর ধরে চুরি করতে করতে ‘মাকড়সা’র মতো দেয়াল বেয়ে ওপরে ওঠার দক্ষতা অর্জন করেন। সর্বশেষ যে বাসায় তিনি চুরি করেছেন, ওই বাসার রান্নাঘরের এগজস্ট ফ্যানের জায়গাটি ছিল ১১ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও ৬ ইঞ্চি প্রস্থের (৬৬ বর্গইঞ্চি)।  

চুরি করে জামিনের অর্থ পরিশোধ

পুলিশ জানায়, এর আগে একটি মুঠোফোন চুরির মামলায় গত ৩ এপ্রিল রোমান আহম্মেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৬ দিন কারাগারে থাকার পর ১৯ এপ্রিল তিনি জামিনে মুক্তি পান। মুক্ত হওয়ার চার দিন পরেই তিনি মাতুয়াইলের ওই বাসায় চুরি করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা মধুসূদন দাস প্রথম আলোকে বলেন, এপ্রিলের শুরুর দিকে মুঠোফোন চুরির মামলায় রোমানসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাঁর সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া অন্যজন হলেন ২৮ বছর বয়সী ফয়সাল। ফয়সাল একজন পেশাদার চোর। ফয়সালের কাছ থেকেই চুরির কৌশল শেখেন রোমান।

মধুসূদন দাসের ভাষ্য, এই চোরচক্রের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন চনপাড়ার শাহ আলম নামে ৩৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। রোমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর শাহ আলম তাঁকে জামিনে মুক্ত করেন। এই জামিনের জন্য যে অর্থ খরচ হয়, তা মাতুয়াইলের বাসায় চুরির পর শাহ আলমকে পরিশোধ করেন রোমান। মাতুয়াইলের বাসায় চুরির মামলায় ১ মে শাহ আলম ও তাঁর ভায়রা জাকিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের আশ্রয়ে চনপাড়াকেন্দ্রিক আরও অন্তত তিনটি চোরচক্র বিভিন্ন এলাকায় চুরি করে।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়ায় অপরাধীচক্রের ‘হোতা’ শাহ আলম। তিনি বাসাবাড়িতে চুরিতে যুক্ত শাহ আলমকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন বলে পুলিশ জানিয়েছে
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়ায় অপরাধীচক্রের ‘হোতা’ শাহ আলম। তিনি বাসাবাড়িতে চুরিতে যুক্ত শাহ আলমকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন বলে পুলিশ জানিয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

শাহ আলম একজন পেশাদার অপরাধী জানিয়ে সহকারী পুলিশ কমিশনার মধুসূদন বলেন, শাহ আলম মাদক কারবারে জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের সময় ১০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছে। চনপাড়ায় শাহ আলমের দুটি বাড়ি রয়েছে। সেখানে তিনি বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। এ ছাড়া ডেমরায় তিনি একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন। চোরচক্রের কোনো সদস্য গ্রেপ্তার হলে তিনি জামিনের ব্যবস্থা করেন। মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত হয়ে তিনি এখন কোটি টাকার সম্পদের মালিক।

চুরির টাকায় গ্যারেজ করার পরিকল্পনা

মাতুয়াইলের বাসায় ৩৫ লাখ টাকার মালামাল চুরির পর রোমান আহম্মেদ ঘনিষ্ঠদের বলছিলেন, তাঁর কপাল খুলে গেছে। রোমানের বাবা গাজীপুরে রিকশা চালান। তাঁর ভাই দিনমজুরের কাজ করেন। তিনি বাবার জন্য একটি গ্যারেজ করার পরিকল্পনা করেন।
পুলিশের ডেমরা অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মধুসূদন দাস বলেন, চুরির পর রোমান কিছু টাকা ধার পরিশোধ করেন। জামিনে বের করার জন্য শাহ আলম যে টাকা খরচ করেছিলেন, সেটি পরিশোধ করেন। আবার কখনো গ্রেপ্তার হলে জামিনে মুক্ত করার জন্য অগ্রিম টাকাও দিয়েছিলেন শাহ আলমকে। নিজের জন্য একটি মোটরসাইকেল কেনার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। বাবা ও ভাইয়ের জন্য একটি গ্যারেজ করার পরিকল্পনাও করেন তিনি। নিজে এবং বন্ধুদের নিয়ে মাদকের পার্টিও দিয়েছিলেন।  

রোমানের কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা এবং বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

চুরির জন্য বাসাবাড়ির খোঁজ

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে খোঁজ করেন, কোন বাসার লোকজন ফ্ল্যাট তালাবদ্ধ করে ঢাকার বাইরে গেছেন। তাঁরা মূলত দেখেন, কোন বাসায় রাতে টানা তিন দিন আলো জ্বলছে না। সেটি দেখেই নিশ্চিত হন, বাসাটি ফাঁকা। তারপর ওই বাসার সিসি ক্যামেরার অবস্থান খুঁজে বের করেন। সাধারণত বাসাবাড়ির পেছনের দিকে সিসি ক্যামেরা থাকে না। এ সুযোগে পেছনের দেয়াল বেয়ে ওপরে উঠে ফাঁকা বাসায় চুরি করেন রোমান।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়ার বাসিন্দা শাহ আলমের ভায়রা জাকিরও এই চোরচক্রের সদস্য বলে পুলিশের ভাষ্য
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়ার বাসিন্দা শাহ আলমের ভায়রা জাকিরও এই চোরচক্রের সদস্য বলে পুলিশের ভাষ্য
ছবি: সংগৃহীত

পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, মাতুয়াইলের যে বাড়িতে চুরি হয়েছে, ওই বাড়ির প্রবেশমুখ, সিঁড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। তবে চোর বাসায় প্রবেশ করেছে বাড়ির পেছন দিয়ে। এ কারণে সেটি ধরা পড়েনি। আবার ভেন্টিলেটর দিয়ে বাসায় প্রবেশ করেছে, মালামাল নিয়ে বের হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা ইকবাল হোসাইন বলেন, শুধু সামনের অংশ নয়, পুরো বাসাবাড়িকেই সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা উচিত। পাশাপাশি ভেন্টিলেটর ও গ্রিল বসানোর সময় বাড়িওয়ালাদের সতর্ক থাকতে হবে। ভেন্টিলেটর এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যেন সেখান দিয়ে কেউ প্রবেশ করতে না পারে। কেউ যদি দীর্ঘ সময় বাসা ফাঁকা রেখে যান, বাসার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাকে জানিয়ে যেতে পারেন।

ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে ঢোকা অভিবাসীদের ২১% বাংলাদেশি


 সাক্ষাৎকারে আইওএমের মহাপরিচালক অ্যামি পোপ। গতকাল রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলেছবি: প্রথম আলো

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছানো মানুষের সংখ্যার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে এই পথ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যত মানুষ ইউরোপে ঢুকেছে, তার মধ্যে ২১ শতাংশ বাংলাদেশি।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক অ্যামি পোপ এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ জলবায়ু পরিবর্তন ও সংঘাতের কারণে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি সংখ্যায় অভিবাসী হয়েছেন। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিপুলসংখ্যক মানুষ অভিবাসী হচ্ছেন কি না, সেটা বোঝার জন্য তথ্য-উপাত্ত ও গবেষণার প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সফরে আসা আইওএমের এই শীর্ষ কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপের সময় এসব কথা বলেন। তিনি এর আগে ওই হোটেলে ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসন প্রতিবেদন-২০২৪’ প্রকাশ করেন।

আইওএমের চলতি বছরের বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে অ্যামি পোপ বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, গত বছর বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর প্রভাব ও সংঘাতের কারণে নতুন বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা বেশি হয়েছে। এটা চমকে দেওয়ার মতো। তিনি বলেন, লাখ লাখ মানুষ এখন জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে বাস করেন।

অ্যামি পোপের মতে, কোন কোন উপাদান মানুষকে অভিবাসনে বাধ্য করে, তার যথাযথ চিত্র নেই। তাই সঠিক চিত্র বোঝার জন্য সরকারগুলোকে বিনিয়োগ করতে হবে।

২১% বাংলাদেশি

বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে অভিবাসন বাড়ছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে অ্যামি পোপ বলেন, এসব অভিবাসীর অনেকেই মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করছেন। ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপ পাড়ির প্রবণতা ২০১৫ সাল থেকে বেড়েছে। ২০২৩ সালে ৫ হাজার অভিবাসী মারা গেছেন। তাঁদের মধ্যে ৫২৪ জন মারা গেছেন ভূমধ্যসাগরে, যে রুট (পথ) দিয়ে সাধারণত বাংলাদেশের মানুষেরা ইতালিতে যান।

বাংলাদেশি কতজন মারা গেছেন জানতে চাইলে অ্যামি পোপ বলেন, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশি মারা গেছেন ২৮৩ জন (ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথে)।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের ১৬ হাজার ২০০ নাগরিক এই পথ দিয়ে ইউরোপে পৌঁছেছেন উল্লেখ করে অ্যামি পোপ বলেন, এর মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিক ৩ হাজার ৪২৫ জন। ২০২৩ সালে ভূমধ্যসাগর হয়ে অনিয়মিত অভিবাসনের তালিকায় চতুর্থ স্থানে ছিল বাংলাদেশের মানুষ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অপতথ্য অভিবাসনের ক্ষেত্রে কতটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে জানতে চাইলে অ্যামি পোপ বলেন, মানব পাচারকারীরা পরিশীলিতভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে থাকে। কারণ, তারা সারা বিশ্বের পরিস্থিতিকে বিবেচনায় রাখে। কাজেই অভিবাসী হতে আগ্রহী লোকজনের জন্য যে পর্যাপ্ত বৈধ পথ নেই, শুধু সেটিই নয়, অভিবাসনের বৈধ উপায় সম্পর্কে জানার বিষয়ে যথেষ্ট অর্থ বিনিয়োগ করা হয় না। এমনকি বৈধ পথে অভিবাসনের জন্য তাঁদের কী ধরনের দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং এর উপায় কী সে সম্পর্কে তথ্য তাঁরা যথাযথভাবে জানতে পারেন না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা ডিজিটাল মাধ্যমে মানব পাচারকারীদের প্রতিহত করতে হলে মানুষকে বৈধ অভিবাসনের পথ সম্পর্কে যথাযথভাবে জানাতে হবে বলে উল্লেখ করেন অ্যামি পোপ।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আইওএমের ভূমিকার বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যামি পোপ বলেন, এটা অনস্বীকার্য যে বাংলাদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি বা অর্থনৈতিক প্রাপ্যতা নিয়ে সরকার চ্যালেঞ্জে রয়েছে।

রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণ ও কাজের সুযোগের প্রসঙ্গ টেনে অ্যামি পোপ বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে শিক্ষা ও কাজের সুযোগ পেতে পারে, সে কথা বলছি। এটা এ জন্য বলছি যে তা না হলে তাঁরা পুরোপুরি মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।’

রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা কমার প্রসঙ্গ টেনে অ্যামি পোপ বলেন, এটা উদ্বেগজনক। করোনা মহামারি, বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি ও বিশ্বের কয়েকটি স্থানে সংঘাতের অনিবার্য ফল এই সহায়তা কমে যাওয়া