Saturday, October 5, 2024

তালেবানকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছে রাশিয়া

 

আফগানিস্তানের তালেবানকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া।

শুক্রবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। রাশিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা তাসের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

আফগানিস্তানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিশেষ প্রতিনিধি জামির কাবুলভের উদ্ধৃতি দিয়ে তাস জানিয়েছে, সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করতে বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। 

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত জুলাইয়ে বলেছিলেন, ‘তালেবানকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মিত্র মনে করে রাশিয়া।’

২০২১ সালের আগস্টে দ্বিতীয়বারের মত আফগানিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতায় বসে তালেবান। তখন থেকেই তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে রাশিয়া। তবে রাশিয়া এখনো তালেবানকে বৈধ সংগঠন বলে স্বীকৃতি দেয়নি।

২০০৩ সালে তালেবানকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল রাশিয়া। আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে তালেবানকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া তাই মস্কোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলেই মনে করা হচ্ছে।

এখনো পর্যন্ত বিশ্বের কোনো দেশ তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি না দিলেও চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্প্রতি  আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে গ্রহণ করেছে। 

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পর আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে মার্কিন সামরিক বাহিনী। তাদের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র অন্য দেশগুলোর সেনারাও যোগ দেয়।

এরপর টানা ২০ বছর যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে সরকার পরিচালিত হয় আফগানিস্তানে। ২০২১ সালে ব্যাপক অভ্যুত্থানের মুখে মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ত্যাগ করলে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে নেয় তালেবান।

দিনাজপুরের বিরামপুর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রির লাভের টাকা বিএনপি সভাপতির পকেটে


 

দিনাজপুর জেলার মানচিত্র
দিনাজপুর জেলার মানচিত্র

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় চারটি ইউপি সচিবদের (ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা) ডিলার সাজিয়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রির লাভের টাকা বিএনপির উপজেলা সভাপতি মিঞা মো. শফিকুল আলম নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে উপজেলা বিএনপির সভাপতি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় উপজেলার কাটলা ইউনিয়নে ১ হাজার ৯৬ জন, খানপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ১৪৪ জন, দিওড় ইউনিয়নে ১ হাজার ৪১৪ জন এবং পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নে ৫৮৪ জন সুবিধাভোগী রয়েছেন। গত সপ্তাহে এসব সুবিধাভোগীর কাছে ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রি করা হয়েছে।

এই চার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সচিবদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল উত্তোলন ও বিক্রির জন্য খাদ্যদপ্তরের নিয়োগ করা ১৭ জন ডিলার রয়েছেন। এসব ডিলার ইউনিয়নভিত্তিক মোট সুবিধাভোগীর বিপরীতে কেজিপ্রতি ১৩ টাকা হারে টাকা ব্যাংকে জমা দিতেন।এরপর ডিলাররা খাদ্যগুদাম থেকে চাল তুলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সুবিধাভোগীদের কাছে প্রতি কেজি ১৫ টাকা দরে বিক্রি করতেন। এতে প্রত্যেক ডিলার চাল বিক্রি করে কেজি প্রতি ২ টাকা লাভ করতেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যেসব ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যান রয়েছেন, সেখানে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রি করতে ইউপি চেয়ারম্যান ও ডিলারদের বাধা দিয়েছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। সে ক্ষেত্রে নিরাপত্তার অজুহাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নির্দেশে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের মাস্টাররোলে নির্ধারিত ডিলারের নামের পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট ইউপি সচিবের নাম, ছবি ও মুঠোফোন নম্বর বসানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ৪ হাজার ২৩৪ জন সুবিধাভোগীর জন্য খাদ্যগুদাম থেকে ১২৭.১৪ মেট্রিক টন চাল কিনতে ইউপি সচিবদের নামে কেজিপ্রতি ১৩ টাকা হারে মোট ১৬ লাখ ৫২ হাজার ৮২০ টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে জমা দিয়েছেন। পরে ইউপি সচিব এবং বিএনপি–সমর্থিত ইউপি সদস্য ও স্থানীয় বিএনপি নেতা–কর্মীদের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের কাছে ওই চাল ১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হয়েছে। পরে চাল বিক্রি করে লাভের ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বিএনপির নেতা শফিকুল আলম ইউপি সচিবের কাছ থেকে নিয়েছেন।

আমার ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১ হাজার ৪১৪ জন সুবিধাভোগী রয়েছেন। বিগত দিনগুলোতে এখানে তিনজন ডিলারের মাধ্যমে চাল বিক্রি করা হতো। এবার উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সেক্রেটারি ডিলারদের চাল উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে টাকা জমা দিতে দেননি।
আবদুল মালেক মণ্ডল, দিওড় ইউনিয়ন পরিষদ, বিরামপুর, দিনাজপুর

উপজেলার দিওড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মালেক মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১ হাজার ৪১৪ জন সুবিধাভোগী রয়েছেন। বিগত দিনগুলোতে এখানে তিনজন ডিলারের মাধ্যমে চাল বিক্রি করা হতো। এবার উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সেক্রেটারি ডিলারদের চাল উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে টাকা জমা দিতে দেননি। বিএনপি নেতারা নিজেরাই টাকা জমা দিয়েছেন। আর ইউপি সচিবের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের কাছে চাল বিক্রির পর লাভের টাকা ওই বিএনপি নেতারা নিয়েছেন। এবারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে উপজেলা প্রশাসন ও বিএনপি নেতারা আমাকে সম্পৃক্ত হতে দেননি।’

একই ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবার আমরা ডিলাররা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল তুলেছি এবং তালিকাভুক্ত সুবিধাভোগীদের কাছে বিক্রি করেছি। এবার উপজেলা খাদ্য অফিস থেকে আমাদের চাল তুলতে নিষেধ করা হয়েছে। তাঁরা বলছেন, ‘‘আমরা নাকি এবার চাল বিক্রির পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না।’’ পরে এ ব্যাপারে জানতে ইউএনও অফিসে গিয়েছিলাম, সেখানে তিনি (ইউএনও) আমাদের কথাই বলতে দেন নাই।’

খানপুর ইউপির সচিব মোস্তফা জামান বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় এ ইউনিয়নে ১ হাজার ১৪৪ জন সুবিধাভোগী রয়েছে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সরকারের পালাবদলের পর ইউএনওর নির্দেশে সচিবদের নামে খাদ্যগুদাম থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল তোলা হচ্ছে। আর চাল বিক্রির লাভের টাকা নিচ্ছেন উপজেলা বিএনপি নেতারা।

আমি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল তোলার জন্য কোনো ব্যাংকে টাকা জমা করিনি। আর কর্মসূচির চাল বিক্রির লাভের টাকা নেওয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেটি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত
মিঞা মো. শফিকুল আলম, সভাপতি, বিরামপুর উপজেলা বিএনপি

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের বাদ দিয়ে ইউপি সচিবদের মাধ্যমে চাল তুলে বিক্রি এবং চাল বিক্রির লাভের টাকা নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মিঞা মো. শফিকুল আলম বলেন, ‘আমি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল তোলার জন্য কোনো ব্যাংকে টাকা জমা করিনি। আর কর্মসূচির চাল বিক্রির লাভের টাকা নেওয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেটি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুজহাত তাসনীম প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৭ জন ডিলার রয়েছে। গত মাসে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য কর্মসূচির চাল বিতরণ বিষয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। পরে সব ডিলারকে ডাকা হয়েছিল। তাঁদের কেউই কর্মসূচির চাল তুলতে রাজি হননি। আর ডিলারদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি, এ কথা সঠিক নয়। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির নীতিমালা অনুযায়ী চাল বিতরণে ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনের কাজও এগিয়ে নেবে সরকার

 

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমফাইল ছবি: পিআইডি

অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কাজের পাশাপাশি নির্বাচনের কাজও এগিয়ে নেবে। নির্বাচনের প্রস্তুতি, নির্বাচন কমিশন গঠন—এই কাজগুলো এগিয়ে যাবে। দুই কাজ একসঙ্গে করার অর্থ হচ্ছে, যখনই সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য আসবে, তখনই যাতে খুব দ্রুত নির্বাচন দিয়ে দেওয়া যায়।

শনিবার রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ কথাগুলো বলেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংলাপের বিষয়বস্তু জানাতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন তিনি। এ সময় তাঁর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্র সংস্কারে ছয়টি কমিশন করার বিষয়টি উল্লেখ করে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে কথা বলবে ছয়টি কমিশন। তিন মাসের সময়সীমার মধ্যে তারা রাজনৈতিক দল এবং অংশীজনের সঙ্গে বসে একটি প্রতিবেদন দেবে। এরপর ওই প্রতিবেদন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দল ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকজনের সঙ্গে কথা বলবে। এরপর যেটা হবে—রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংস্কারের বিষয়ে একটি ঐকমত্য এলে... এর ওপর নির্ভর করবে নির্বাচন হতে সময়টা কত দিন লাগবে।

এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আলম বলেন, প্রশাসন, প্রশাসনের বাইরে, দলীয়ভাবে, যে যেখান থেকে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বা ভূমিকা রেখেছিলেন, তাঁদের বিচারের আওতায় আনা হবে। ধীরে ধীরে সবাইকে সঠিক মামলা ও তদন্তের ভিত্তিতে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

মাহফুজ আলম আরও বলেন, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আয়োজিত সংলাপে সরকার যে কমিশন নিয়ে কাজ করছে, সে ছয়টি কমিশন নিয়ে রাজনৈতিক দলের অভিমত জানতে চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে বিদ্যমান বিভিন্ন পরিস্থিতি বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুর্গাপূজায় নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

এ ছাড়া সব রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এই সরকার তাদের সরকার বলে উল্লেখ করেছেন বলে জানান মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, নির্বাচনের রোডম্যাপ (পথনকশা) নিয়েও কথা এসেছে। কমিশনগুলোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে কীভাবে সবকিছু ঢেলে সাজানো হবে, তা নিয়ে কথা হয়েছে। নির্বাচন ও সংস্কার—এই দুটি বিষয় সমান্তরালে কীভাবে চলমান থাকবে, এ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আলম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার প্রথম থেকেই সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করছে। ধীরে ধীরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগের অবস্থানে ফিরে আসছে। তিনি বলেন, ‘আশা করি খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। চাঁদাবাজি বন্ধ করার সুযোগ তৈরি হবে। আশা করি, দ্রব্যমূল্যের একটি সুরাহা আমরা করতে পারব।’

Wednesday, October 2, 2024

জুবাইদা রহমানের সাজা স্থগিত করেছে সরকার

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমানের সাজা স্থগিত করেছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সাজা স্থগিত চেয়ে জুবাইদা রহমানের করা আবেদন এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামতের আলোকে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কাফরুল থানায় তাঁর বিরুদ্ধে দেওয়া দণ্ডাদেশ বিজ্ঞ আদালতে আত্মসমর্পণপূর্বক আপিল করার শর্তে এক বছরের জন্য নির্দেশক্রমে স্থগিত করা হলো।

প্রজ্ঞাপনে ২২ সেপ্টেম্বর লেখা থাকলেও আজ বুধবার (২ অক্টোবর) বিষয়টি জানা গেছে। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত বছর জুবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন আদালত।


 

সরকার পতনের ২ মাস আগে জ্বালানি তেল নিয়ে বসুন্ধরাকে বিশেষ সুবিধা

 




বিগত দেড় দশকে বিদ্যুৎ উৎপাদন অর্ধেকের বেশি চলে গেছে বেসরকারি খাতের দখলে। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির অনুমতি পেয়েছে বেসরকারি কোম্পানি। এরপর একটি কোম্পানিকে সুবিধা দিতে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বেসরকারি খাতে জ্বালানি তেল বিক্রির নীতিমালা করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে বাজারে সরাসরি জ্বালানি তেল বিক্রির অনুমোদন পায় বসুন্ধরা গ্রুপ।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এর আগে ১০ জুন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনে (বিপিসি) একটি চিঠি পাঠায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এতে বলা হয়, অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে মজুত, পরিবহন ও প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে উৎপাদিত তেল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিক্রির বিষয়ে বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানিকে অনুমতি দেওয়া হলো।

দেশে বর্তমানে জ্বালানি তেল আমদানি ও সরবরাহ করে একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বিশেষজ্ঞ ও ভোক্তা অধিকারকর্মীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের ব্যবসা বেসরকারি খাতে দেওয়া হলে মানুষকে তা বেশি দাম দিয়ে কিনতে হবে। যেটা হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে। জ্বালানি তেল একটি ‘কৌশলগত’ পণ্য। এর ব্যবসা পুরোটাই সরকারি খাতে থাকা উচিত।

বেসরকারি খাতের অভিজ্ঞতা খুব খারাপ। একচেটিয়া মুনাফার প্রবণতায় মূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে না। জ্বালানি খাতের বাজার ব্যবসায়ীদের হাতে ছাড়া যাবে না, এটা সরকারের কাছেই রাখতে হবে।
এম শামসুল আলম, জ্বালানি উপদেষ্টা, ক্যাব 

বাজারে জ্বালানি তেল বিক্রির যে অনুমতি জ্বালানি বিভাগ দিয়েছে, তা জানিয়ে গত ১৮ জুলাই বসুন্ধরাকে চিঠি দেয় বিপিসি। এতে চুক্তি করার আগে নন-জুডিশিয়াল স্টাম্পে লিখিত অঙ্গীকারনামা ও ৩৮৮টি ফিলিং স্টেশনের সমন্বয়ে নিজস্ব বিপণনব্যবস্থা তৈরিসহ বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়। তবে এখন পর্যন্ত বসুন্ধরা কর্মপরিকল্পনা জমা দেয়নি।

বিপিসির দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি খাতে জ্বালানি তেল বিক্রির অনুমতি প্রদানে রাজি ছিল না বিপিসি। তাই শুরু থেকেই তারা এ বিষয়ে নেতিবাচক সুপারিশ করেছে জ্বালানি বিভাগে। সাত বছরে এটি দফায় দফায় পিছিয়েছে। এরপর জ্বালানি বিভাগ অনুমোদন দেওয়ার এক মাসেরও বেশি সময় পর বসুন্ধরাকে চিঠি পাঠানো হয়। এখন নতুন সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে বিপিসি।

দেশে বর্তমানে জ্বালানি তেল আমদানি ও সরবরাহ করে একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বিশেষজ্ঞ ও ভোক্তা অধিকারকর্মীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের ব্যবসা বেসরকারি খাতে দেওয়া হলে মানুষকে তা বেশি দাম দিয়ে কিনতে হবে। যেটা হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে।

অনুমোদনের পত্রে ৩৭টি শর্ত বেঁধে দেয় জ্বালানি বিভাগ। সরকারি এসব শর্ত ভঙ্গ করলে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই অনুমোদন বাতিল করা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়। শর্তের মধ্যে রয়েছে পরিচালনা ও তেল বিক্রি নিয়ে বিপিসির সঙ্গে চুক্তি ও নিরাপত্তা জামানত প্রদান করা, প্রথম তিন বছর উৎপাদিত জ্বালানি তেলের ৬০ শতাংশ বিপিসির কাছে ও বাকি ৪০ শতাংশ নিজস্ব বিপণনব্যবস্থায় বিক্রি এবং পরবর্তী দুই বছর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত তেল বিপিসির বাইরে বিক্রি করার সুযোগ। তেলের দাম নির্ধারণ করবে বিপিসি। বিপিসির চাহিদা না থাকলে সংস্থাটির কাছ থেকে অনাপত্তি নিয়ে বাজারে বা বিদেশে রপ্তানি করা যাবে জ্বালানি তেল।

শর্তে আরও বলা হয়েছে, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তেল বিক্রির জন্য তিন বছরে সারা দেশে ৩৮৮টি ফিলিং স্টেশন বা পরিবেশক নিতে পারবে বসুন্ধরা। যেসব সিএনজি ও এলপিজি স্টেশনের তেল বিক্রির অনুমতি নেই, তারাও বসুন্ধরার পরিবেশক হতে পারবে। সরকারি কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার পরিবেশকেরা চুক্তি বাতিল করে বসুন্ধরার পরিবেশক হতে পারবে।

বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, বসুন্ধরা এখন পর্যন্ত কর্মপরিকল্পনা জমা দেয়নি। তাই এটি নিয়ে আর কোনো অগ্রগতি নেই। তবে বেসরকারি খাতে জ্বালানি তেল বিক্রির নীতিমালা বাতিল হয়নি। জ্বালানি বিভাগও এ বিষয়ে নতুন কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তিনি বলেন, বসুন্ধরা কর্মপরিকল্পনা জমা দিলে জ্বালানি বিভাগের নির্দেশনা নিয়ে এগোবে বিপিসি।

বসুন্ধরার জন্যই তৈরি হয় নীতিমালা

বেসরকারি খাতে জ্বালানি তেল বিক্রির অনুমোদন পেতে আবেদনকারীর যোগ্যতায় বলা হয়েছে, বছরে ১৫ লাখ টন জ্বালানি তেল পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন শোধনাগার তৈরি করতে হবে। এর মধ্যেই দুই লাখ টন জ্বালানি তেল মজুতের সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। বিপিসির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মূলত বসুন্ধরাকে অনুমতি দিতেই ‘বেসরকারি পর্যায়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিপূর্বক মজুত, প্রক্রিয়াকরণ, পরিবহন ও বিপণন নীতিমালা-২০২৩’ তৈরি করা হয়। বসুন্ধরা ছাড়া আর কেউ আবেদন করেনি।

ঢাকার কেরানীগঞ্জে বসুন্ধরার পরিশোধনাগার থেকে ২০১৯ সালে বিটুমিন উৎপাদন শুরু হয়। সড়ক-মহাসড়কের ঢালাই কাজে এসব বিটুমিন ব্যবহৃত হয়। বিটুমিন পরিশোধনের পাশাপাশি কিছু পরিমাণে ডিজেল, ফার্নেস তেল ও ন্যাপথা উৎপাদন করা হয় সেখানে। এর বাইরে চট্টগ্রামে আরও একটি পরিশোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল বসুন্ধরার।

বসুন্ধরা এখন পর্যন্ত কর্মপরিকল্পনা জমা দেয়নি। তাই এটি নিয়ে আর কোনো অগ্রগতি নেই। তবে বেসরকারি খাতে জ্বালানি তেল বিক্রির নীতিমালা বাতিল হয়নি। জ্বালানি বিভাগও এ বিষয়ে নতুন কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তিনি বলেন, বসুন্ধরা কর্মপরিকল্পনা জমা দিলে জ্বালানি বিভাগের নির্দেশনা নিয়ে এগোবে বিপিসি।
বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান

বিপিসি সূত্র বলছে, বসুন্ধরা বিটুমিন উৎপাদনের প্ল্যান্ট স্থাপনের অনুমতি পায় ২০১৬ সালের ১৫ জুন। এরপর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জ্বালানি তেল বিক্রি করার অনুমতি চেয়ে ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আবেদন করে। ওই বছরের অক্টোবরে বিপিসি এ বিষয়ে নেতিবাচক মতামত পাঠায় জ্বালানি বিভাগে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে জ্বালানি বিভাগের নির্দেশনায় একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি বসুন্ধরার উৎপাদিত তেল বিপিসির কাছে বিক্রির সুপারিশ করে। ২০২০ সালের জুলাইয়ে আবার আবেদন করে বসুন্ধরা। তাদের উৎপাদিত বিটুমিন সরাসরি ক্রেতার কাছে ও ডিজেল বিপিসির কাছে বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়। আর বিপিসির অনুমতি নিয়ে তারা বাজারে বিক্রি করছে ফার্নেস তেল ও ন্যাপথা।

সরকারি নথি বলছে, জ্বালানি বিভাগ থেকে তেল সরাসরি বাজারে বিক্রির অনুমতি না পেয়ে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা তৌফিক–ই–ইলাহী চৌধুরীর কাছে আবেদন করে বসুন্ধরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের জুনে আবার বিপিসির মতামত চায় জ্বালানি বিভাগ। এবার বেসরকারি খাতে সীমিত পরিসরে আমদানি ও বিপণনের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে বলে মতামত দেয় বিপিসি। এরপর এ–সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরি নিয়ে দফায় দফায় চিঠি চালাচালি করে বিপিসি ও জ্বালানি বিভাগ। গত বছরের ১১ জুন বেসরকারি খাতে জ্বালানি তেল বিক্রির নীতিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ওই বছরের নভেম্বরে জ্বালানি তেল বিক্রির অনুমতি চেয়ে আবার আবেদন করে বসুন্ধরা অয়েল। এরপর গত জুনে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বসুন্ধরা গ্রুপের প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া উপদেষ্টা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না। বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাসের ব্যবসা দেখেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহানের সেক্রেটারি ও বসুন্ধরা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মাকসুদুর রহমান।

মাকসুদুর রহমানের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

বসুন্ধরা সরাসরি বাজারে তেল বিক্রি শুরু করলে তাদের প্রতিযোগিতা হবে বিপিসির সঙ্গে। বিশেষজ্ঞ ও বিপিসির কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, তেলের বাজারে সরাসরি বিক্রির অনুমতি পেলে শুরুতে বেসরকারি খাত কম দামে বিক্রি করে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে সংকটে ফেলবে

জ্বালানিনিরাপত্তায় হুমকির শঙ্কা

বসুন্ধরা সরাসরি বাজারে তেল বিক্রি শুরু করলে তাদের প্রতিযোগিতা হবে বিপিসির সঙ্গে। বিশেষজ্ঞ ও বিপিসির কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, তেলের বাজারে সরাসরি বিক্রির অনুমতি পেলে শুরুতে বেসরকারি খাত কম দামে বিক্রি করে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে সংকটে ফেলবে। একসময় তেলের বাজার দখল নিয়ে তারা দাম বাড়িয়ে দেবে। এখন জাতীয় কোম্পানি জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে দাম নির্ধারণ করে। আর বেসরকারি খাত দেখে মুনাফা।

বিশেষজ্ঞরা এ ক্ষেত্রে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) উদাহরণ দেন। তাঁরা বলছেন, এলপিজি খাত বেসরকারি কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণে। সরকারিভাবে দাম নির্ধারণ করা হলেও, তা কেউ মানে না। মাশুল দিতে হচ্ছে ভোক্তাদের। বিদ্যুৎ খাতে এখন বিপুল পরিমাণে কেন্দ্রভাড়া দিতে হচ্ছে। বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ব্যাপকভাবে।

পেট্রলপাম্পের মালিকেরা বলছেন, বেসরকারি কোম্পানি শুরুতে কম দামে সরবরাহ করে সরকারি কোম্পানির বাজার নষ্ট করতে পারে। আবার বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে মজুত করে দাম বাড়ানোর চাপ তৈরি করতে পারে। জ্বালানি তেল সরকারি খাতে থাকায় দাম নিয়ন্ত্রণ সহজ হচ্ছে।

বেসরকারি খাতের অভিজ্ঞতা খুব খারাপ। একচেটিয়া মুনাফার প্রবণতায় মূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে না। জ্বালানি খাতের বাজার ব্যবসায়ীদের হাতে ছাড়া যাবে না, এটা সরকারের কাছেই রাখতে হবে। তাই অবিলম্বে বসুন্ধরার অনুমোদন বাতিল করতে হবে।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম

দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা বছরে প্রায় ৭০ লাখ টন। এর মধ্যে দেশে ১৫ লাখ টন পরিশোধন করে সরকারি কোম্পানি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড। বাকিটা পরিশোধিত অবস্থায় আমদানি করা হয়। প্রতিবছর জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ছে। ২০২৬-২৭ অর্থবছরে চাহিদা ৮০ লাখ টন ছাড়াতে পারে। অপরিশোধিত তেল আমদানি করে দেশে পরিশোধন করলে খরচ কম পড়ে। তাই ৩০ লাখ টন পরিশোধন সক্ষমতার কারখানা করতে ইআরএল-২ নামে প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। অবশ্য এক যুগেও তা সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি খাতের অভিজ্ঞতা খুব খারাপ। একচেটিয়া মুনাফার প্রবণতায় মূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে না। জ্বালানি খাতের বাজার ব্যবসায়ীদের হাতে ছাড়া যাবে না, এটা সরকারের কাছেই রাখতে হবে। তাই অবিলম্বে বসুন্ধরার অনুমোদন বাতিল করতে হবে।

পেট্রলপাম্পের মালিকেরা বলছেন, বেসরকারি কোম্পানি শুরুতে কম দামে সরবরাহ করে সরকারি কোম্পানির বাজার নষ্ট করতে পারে। আবার বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে মজুত করে দাম বাড়ানোর চাপ তৈরি করতে পারে। জ্বালানি তেল সরকারি খাতে থাকায় দাম নিয়ন্ত্রণ সহজ হচ্ছে।

Tuesday, October 1, 2024

সাবেক এমপি আব্দুর রউফ গ্রেপ্তার

 

কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ’কে রাজধানীর মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। 

মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) দিবাগত রাতে র‍্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন

তিনি বলেন, কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রউফকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। রাজধানীর মিরপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।


একাধিক হত্যা মামলার আসামিসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের ‘পুনর্বাসন’ বিএনপিতে


 গত ৫ আগস্টের পর মাত্র কয়েকদিনেই ভোল পাল্টাচ্ছেন মাদারীপুরের শিবচর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী চেয়ারম্যান ও নেতারা। শিবচরে বিএনপির এক সমাবেশ ও মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের একঝাঁক নেতা বিএনপিতে যোগ দেন। এ যেন ‘পুনর্বাসন!’ বলে অভিযোগ স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের।

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের বাদশা ব্যাপারীর বাড়িতে বিএনপির একাংশের এক সুধী সমাবেশ ও মতবিনিময় সভা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহসেন উদ্দিন সোহেল ব্যাপারী আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় নেতা এবং স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য নূর-ই-আলম চৌধুরী ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুনির চৌধুরীর খুবই আস্থাভাজন। পুরোদস্তুর একজন আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে তিনি বেশ সমাদৃত শিবচরে। পটপরিবর্তনের প্রায় দুই মাসের মধ্যেই তাকে বিএনপির এক মতবিনিময় সভায় উপস্থিত থাকতে দেখে সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিব্রত অবস্থায় পড়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরাও।

সোমবার দুপুরে শিবচরের সমাবেশ ও মতবিনিময় সভায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতা হত্যার একাধিক মামলার আসামি ও আওয়ামী লীগের ওই চেয়ারম্যানকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। একইদিন আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে বিএনপিতে যোগদান করানো হয়েছে। এই নিয়ে জেলা জুড়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে।

জানা গেছে, সভায় বিএনপি নেতা কামাল জামান নুরুদ্দীন মোল্লা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। নুরুদ্দিন মোল্লাকে স্বাগত জানাতে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোহসেন উদ্দিন সোহেল ব্যাপারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। পরে সভার মঞ্চেও বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে ওই চেয়ারম্যানকে।

একই অনুষ্ঠানে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সজীব হাওলাদারকে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করারও খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও একই সঙ্গে এলাকার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আরো বেশকিছু নেতারও বিএনপিতে যোগদানের খবর পাওয়া গেছে। এতে করে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে।

শেখ নূর উদ্দীন নামে এক ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি লতিফ মোল্লার আপন ছোট ভাই কামাল জামান নূরুদ্দীন মোল্লা একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েও পায়নি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়। এরপরে থেকে নিজেকে বিএনপি নেতা বলে পরিচয় দিতে থাকেন। ২০১৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত শিবচরে তার কোনো কার্যক্রম ছিল না।’

তিনি আরো বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে তিনি হঠাৎ করে প্রকাশ্যে এসে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিএনপিতে পুনর্বাসন করে রাজনীতিতে ফিরতে চেষ্টা করছেন। তিনি এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যা মামলার ২ জন আসামি ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল ব্যাপারী ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সজীব হাওলাদারকে সোমবার দলে নিয়ে বিএনপি কর্মী সমাবেশ করেছেন। এটা দুঃখজনক। এতে করে শিবচরে বিএনপির ওপরে আস্থা হারাচ্ছেন সাধারণ জনগণ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে থেকে বিগত ১৭ বছর সব সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন তারা। দিন বদলে এই পরিবর্তন! এটা খুবই লজ্জার!’

এদিকে যোগদান বা সমাবেশে উপস্থিত থাকার বিষয় জানতে সোহেল ব্যাপারী, সজীব হাওলাদারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। এ ছাড়া বিএনপি নেতা কামাল জামান নুরুদ্দিন মোল্লার মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন খলিফা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যারা ত্যাগী, আস্থাশীল এমন নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় না করে কিছু দালাল চক্রের সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের দলে স্থান দেওয়া হয়েছিল। তারা দলের সব সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। তারা এসেছিল ব্যবসা করতে ব্যবসা শেষ এখন আবার চলে গেছেন। আমাদের দলের নেতা জননেতা নূর-ই আলম চৌধুরী কোনো  সাংগঠনিক সম্পাদক বা দলের কারও সঙ্গে আলাপ আলোচনা না করে তাদের দলে এনছিল। এখন তারা সুযোগ পেয়ে চলে গেছে।’

উপজেলা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানাই। যারা এ কাজগুলো করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা শিবচর উপজেলা বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।

বিশ্বের ১২০ শহরের মধ্যে বায়ুদূষণে ঢাকা আজ ষষ্ঠ

 



বায়ুদূষণে আজ বুধবার বিশ্বের ১২০টি শহরের মধ্যে সকাল সাড়ে আটটার দিকে রাজধানী ঢাকার অবস্থান ষষ্ঠ। এ সময় আইকিউএয়ারের বাতাসের মানসূচকে ঢাকার স্কোর ১৫৭। বাতাসের এই মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে বিবেচনা করা হয়। গতকাল এ সময় ঢাকার অবস্থান ছিল অষ্টম আর স্কোর ছিল ১৫১।

বৃষ্টির জন্য শুধু গত সোমবার বাতাসের মান কিছুটা ভালো ছিল। এরপর আবার দূষণ বাড়তে শুরু করে।

বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং সতর্ক করে।

আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে বায়ুদূষণে প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল পাকিস্তানের লাহোর ও ভারতের দিল্লি। দুই শহরের স্কোর ২১৭ ও ১৮১।

আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে তাকে মাঝারি বা গ্রহণযোগ্য মানের বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর ধরা হয়। সংবেদনশীল গোষ্ঠীর মধ্যে আছেন বয়স্ক, শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি ও অন্তঃসত্ত্বা।
স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা অস্বাস্থ্যকর বাতাস। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তাকে খুবই অস্বাস্থ্যকর বায়ু ধরা হয়। ৩০১ থেকে তার ওপরের স্কোরকে দুর্যোগপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়।

দূষণ থেকে সুরক্ষায় পরামর্শ

ঢাকার বায়ু আজ অস্বাস্থ্যকর। এই বায়ু সেবন যেকোনো মানুষের জন্যই ক্ষতিকর। আজ ঢাকার যে তিন অঞ্চলের দূষণ পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত বেশি খারাপ, সেগুলোর মধ্যে আছে ইস্টার্ন হাউজিং, হেমায়েতপুর ও আইসিডিডিআরবি। এসব স্থানে দূষণের স্কোর যথাক্রমে ১৮৪, ১৮০ ও ১৭৮।

ঢাকায় আজ বায়ুদূষণের যে অবস্থা, সেখান থেকে সুরক্ষায় বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে আইকিউএয়ার। এর মধ্যে আছে বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করা, খোলা স্থানে ব্যায়াম না করা এবং জানালা বন্ধ করে রাখা।