Wednesday, September 25, 2024

আনলিমিটেড মেয়াদে ডাটা ও বছর মেয়াদে বান্ডেল অফার নিয়ে বাজারে এলো টেলিটকের জেন জি (Gen-Z) প্যাকেজ


 জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত শব্দ 'জেনারেশন জি' বা 'জেন জি' কে অনুসরণ করে তরুণদের জন্য টেলিটক নিয়ে এলো 'জেন জি' (Gen-Z) প্যাকেজ। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সচিবালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সভাকক্ষে “জেন-জি (Gen-Z)” প্যাকেজের উদ্বোধন করা হয়।

জেন-জি নতুন প্যাকেজের মূল্য ১৫০ টাকা। তবে, প্রথম ৩০ দিনে গ্রাহক মাত্র ১০০ টাকা দিয়ে প্যাকেজটি ক্রয় করতে পারবে। এই প্যাকেজে রয়েছে বাজারের সবচেয়ে কমমূল্যে আনলিমিটেড মেয়াদে ডাটা ও বছর মেয়াদে বান্ডল অফার সুবিধা। আরো রয়েছে ১ সেকেন্ড পালস্, সাশ্রয়ী ভয়েস, ট্যারিফ এবং চাকুরী প্রার্থীদের জন্য ১২ মাসের Alljobs Premium Membership service এর ফ্রি সুবিধা। “জেন-জি”নতুন গ্রাহক টেলিটক কাষ্টমার কেয়ার থেকে সিম ক্রয় করতে পারবেন। এছাড়াও গুগল প্লে স্টোর (Google Play Store) থেকে মাই টেলিটক (Myteletalk App) অ্যাপে নিবন্ধন করার মাধ্যমে বর্তমানে টেলিটক ব্যবহারকারীগণ জেন-জি প্যাকেজের অফারসমূহ গ্রহণ করতে পারবেন। পাশাপাশি ফিচার ফোন ব্যবহারকারিগণ USSD Code (*111#) এর মাধ্যমে এ সুবিধা পাবেন।

বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুনঃ www.teletalk.com.bd.

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ড. মোঃ মুশফিকুর রহমান, টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালনা পরিষদের সদস্যবর্গ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল মাবুদ চৌধুরী সহ টেলিটক এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


গুলিতে নিহত কাইয়ুমের পরিবারকে ৭ লাখ টাকা দিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

 

গুলিতে নিহত আবদুল কাইয়ুমের পরিবারের সদস্যদের হাতে সাত লাখ টাকার চেক তুলে নেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হায়দার আলী। গতকাল বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সম্মেলনকক্ষেছবি: সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিতে নিহত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (এআইএস) বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল কাইয়ুমের পরিবারকে সাত লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার এআইএস বিভাগের সম্মেলনকক্ষে আবদুল কাইয়ুমের স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে তাঁর পরিবারের সদস্যদের হাতে সাত লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য মো. হায়দার আলী। গতকাল রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ এমদাদুল হক।

স্মরণসভায় এআইএস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোহাম্মদ বেলালের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেন উপাচার্য হায়দার আলী বলেন, দেশের সব জায়গায় বৈষম্য ছিল। ছাত্ররা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুনভাবে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে অনিয়মগুলো দূর করতে সর্বদা সচেষ্ট থাকবেন। শহীদ আবদুল কাইয়ুম স্মরণে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মৃতিফলক স্থাপনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

স্মরণসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সহ–উপাচার্য মাসুদা কামাল বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশের জন্য জীবন দিয়ে আবদুল কাইয়ুম তাঁর যে ভূমিকাটুকু ছিল, সেটা পালন করে গেছেন। কিন্তু আরও যে লাখো কোটি কাইয়ুম রয়েছেন, তাঁদের কাছে দেশটাকে রেখে গেছেন তিনি। আর যাতে স্বৈরাচারের হাতে দেশ না যায়, সেদিকে লক্ষ রেখে এবং সব শহীদসহ আবদুল কাইয়ুমকে স্মরণ রেখে আমরা এই দেশটাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, দেশটাকে যাতে আর কেউ নস্যাৎ করতে না পারে, সে জন্য দৃঢ় চেতনা জাগ্রত করে সজাগ থাকতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আবদুল হাকিম, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন মোহাম্মদ আহসানউল্লাহ, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

৫ আগস্ট কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল কাইয়ুম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নেন। ওই দিন তিনি ঢাকার সাভারের নিউমার্কেট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। পরে সাভার এনাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আবদুল কাইয়ুম বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি সাভারের সিআরপি হাসপাতালের পাশের টগরমুড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ কফিল উদ্দিনের ছেলে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট।


নবম শ্রেণি পাশ করেই ২০ বছর ধরে অস্ত্রোপচার!

 

পাশ করেননি ডাক্তারি। তাতে কী হয়েছে? ২০ বছর ধরে দেদার করে চলেছেন অস্ত্রোপচার। ঠিক যেন ‘মুন্না ভাই এমবিবিএসস’ সিনেমার মত। তবে শুধু সিনেমা নয় এবার বাস্তবে ঘটেছে একই ঘটনা। থাইল্যান্ডে একজন ব্যক্তি মাত্র নবম শ্রেণী পাশ করেই ২০ বছর ধরে করে চলেছেন অস্ত্রোপচার।

 

প্রশ্ন হল কীভাবে সামনে এল কুকর্ম? এক ব্যক্তিকে অপারেশন করার পর মারাত্মক ইনফেকশন হয়ে যায়। সে ডাক্তারের কাছে আসলেও মেলেনি সদুত্তর। তাতেই রোগীর সন্দেহ হয়। সন্দেহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই রোগী পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে। এরপর পুরো ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করে।

 


পুলিশ স্টিং অপারেশন শুরু করতেই সামনে আসে ওই ডাক্তার ভুয়া। সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আর গ্রেফতারির পরই সে স্বীকার করে যে ডাক্তারি নিয়ে কোনদিনও পড়াশোনা করেনি। তাতেই প্রকাশ্যে আসে ভুয়া ডাক্তারের আসল মুখোশ।

Tuesday, September 24, 2024

বাদ যাচ্ছে রামু-গুনদুম রেললাইন নির্মাণ

 

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের ফাস্টট্র্যাকভুক্ত মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যেও রয়েছে কম গুরুত্বের প্রকল্প। রাজনৈতিক বিবেচনা বা আবেগের বশবর্তী হয়ে প্রকল্প নেওয়ায় এখন এ ধরনের প্রকল্প গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। ফলে নতুন করে মূল্যায়ন করতে হচ্ছে। তেমনি একটি প্রকল্প ‘দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ।’ 

Advertisement

এই প্রকল্প থেকে বাদ যাচ্ছে রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণকাজ। ফলে বেঁচে যাচ্ছে ৬ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। এজন্য প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব পাঠিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। আজ বুধবার প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে প্রস্তাবটি। পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠেয় সভায় সভাপতিত্ব করবেন ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সোলেমান খান। সভায় বিভিন্ন কার্যক্রমের বাস্তবায়নসহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

প্রকল্পটির বিষয়ে সম্প্রতি পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, কক্সবাজার গুনদুম প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার আগে গভীরভাবে চিন্তা করা হয়নি। কেননা তখন বলা হয়েছিল এটি বাস্তবায়ন করা হলে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো গুনদুমের ওপারে মিয়ানমারে শুধু পাহাড়ি এলাকা। সেখানে ওপারে রেললাইন তৈরির কোনো পরিকল্পনাও নেই। তাহলে এত টাকা ব্যয় করে অপরিকল্পিত প্রকল্প নেওয়ার কী প্রয়োজন ছিল।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঋণ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তবে রামু-গুনদুম অংশের জন্য অর্থায়ন করতে অপারগতা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এছাড়া মিয়ানমারে যে সংঘাতময় অস্থির পরিস্থিতি চলছে সেখানে ট্রান্স এশিয়ান রেল সংযোগ স্থাপন আপাতত সম্ভব নয়। এজন্য সরকারের নিজস্ব তহবিলের বিপুল অঙ্কের ব্যয় করে গুনদুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করাটা যৌক্তিক হবে না। এটা বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বাদ দেওয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৮১৫ কোটি ৪৭ লাখ এবং এডিবির ঋণ ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের সময় ধরা হয় ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। সেই সঙ্গে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। তবে এবার দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে মেয়াদ না বাড়লেও ব্যয় ৬ হাজার ৬৮২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা কমিয়ে মোট ১১ হাজার ৩৫১ কোটি ৬২ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ২ হাজার ৭১২ কোটি এবং এডিবির ঋণ থেকে ৮ হাজার ৬৩৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। ফলে ব্যয় কমছে ৩৭ দশমিক ০৬ শতাংশ।

সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, যখন প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল তখন পরিকল্পনায় ভুল ছিল এটা ঠিক কথা নয়। ওই সময়ের চিন্তা ছিল বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ওই অংশ দুটির মধ্যে রেল সংযোগ তৈরি করা। এছাড়া মিয়ানমারের যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে সেটি আগে ছিল না। সম্প্রতি হয়েছে। আবার চিরস্থায়ীভাবে যে এমন পরিস্থিতি থাকবে সেটিও বলা যায় না। আশা করা যায় পরিস্থিতি এক সময় ভালো হবে। সেই সঙ্গে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের ট্রেড রিলেশন এখনো সচল আছে। তবে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা যদি অর্থায়ন করতে না চায় সেক্ষেত্রে আমাদের ফিরে আসা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু প্রথম কারিগরি এবং আর্থিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কোনো ত্রুটি ছিল কিনা সে বিষয়ে রেলওয়েকে পরিকল্পনা কমিশন প্রশ্ন করতে পারে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, সর্বশেষ অনুমোদিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) দোহাজারী থেকে কক্সবাজার এবং রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত মোট ১২৮ কিলোমিটার ভূমি অধিগ্রহণসহ রেল ট্র্যাক নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু বর্তমানে রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণসহ ২৮ কিলোমিটার রেল ট্র্যাক নির্মাণ অংশ বাদ দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে মূল প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে কিনা সেটি নিয়ে পিইসি সভায় প্রশ্ন করা হবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের।

এছাড়া সংশোধিত ডিপিপিতে নতুন ৮টি ফুটওভার ব্রিজ, কক্সবাজারে বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনের ক্যাপাসিটি ৬০০ কেভিএ থেকে ২০০০ কেভিএ-তে উন্নীতকরণ এবং লেভেলক্রসিং গেটের পরিবর্তে ৪৬টি সড়ক আন্ডারপাস নির্মাণ করার কথা বলা হয়েছে। আরও আছে নতুন করে ৪টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ, প্ল্যাটফর্ম শেডের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিসহ নতুন প্ল্যাটফর্ম শেড নির্মাণ, কক্সবাজার রেলওয়ে রেস্ট হাউজ দোতলা থেকে ৫ তলায় উন্নীতকরণ অঙ্গ অন্তর্ভুক্তি। এসব অঙ্গের কাজ ইতোমধ্যে বাস্তবায়নও করা হয়েছে। কিন্তু এগুলোর কাজ শুরুর আগে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন গ্রহণ করা হয়েছে কিনা এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হবে পিইসি সভায়। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রস্তাবিত সংশোধিত ডিপিপিতে যেসব কাজের ভ্যারিয়েশনের প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলোর ভ্যারিয়েশন প্রস্তাব কোন পর্যায়ে অনুমোদন করা হয়েছে তার প্রমাণকসহ রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চাওয়া হবে।


এক বোন স্বাক্ষর না দিয়ে ব্ল্যাকমেল করছে


 মিতি সানজানা

প্রশ্ন: আমি মা–বাবার একমাত্র ছেলে। সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। আমার বড় তিন বোন রয়েছে। আমরা সবাই বিবাহিত। ২০০৪ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে এককভাবে সব সম্পত্তি মা-ই ভোগ করছিলেন। ২০২১ সালে আমরা বাবার নামে থাকা সম্পত্তি ওয়ারিশদের নামে নামজারি করাই। তারপর বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য একটি জায়গার ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ ডেভেলপার কোম্পানিকে প্রদান করি। আমার ৩ নম্বর বোন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রদান করলেও পরে অন্যান্য দাপ্তরিক কাগজে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানায়। সে তার স্বাক্ষরের গুরুত্ব বুঝে ব্ল্যাকমেল করছে। সে দাবি করছে, ভবনের ভালো ভালো অংশ তাকে দিতে হবে, প্রাপ্য অংশের চেয়ে বেশি দিতে হবে এবং কাজ শুরুর আগেই তাকে লিখে দিতে হবে। আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। আমাদের এই অবস্থায় রেখেই সে পরিবার নিয়ে কানাডায় চলে গেছে। তিন বছর ধরে তার কোনো খোঁজখবর আমরা পাচ্ছি না। ডেভেলপারও কাজ শুরু করছে না। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। এমন অবস্থায় একজন অংশীদারের (১৭.৫ শতাংশ) অনুপস্থিতিতে আমাদের সম্পত্তিগুলো কীভাবে ডেভেলপ ও সঠিক প্রক্রিয়ায় বণ্টন করতে পারি?

মো. তৌহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া, মোহাম্মদপুর, ঢাকা

উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। কেউ যদি দেশে অবস্থানরত কাউকে ‘ফরেন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’-এর মাধ্যমে যেকোনো কাজ তাঁর অনুপস্থিতিতে সম্পাদনের ক্ষমতা অর্পণ করেন বা দেশে বসেই কোনো ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ প্রদান করেন, তাহলে সেই দলিলে অর্পিত ক্ষমতাবলে সেই ব্যক্তি পাওয়ার অব অ্যাটর্নিদাতার পক্ষে সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন।

‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন ২০১২’-এর ধারা-২ অনুযায়ী পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামা এমন একটি দলিল, যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি তার পক্ষে ওই দলিলে বর্ণিত বিভিন্ন কাজ সম্পাদনের জন্য আইনানুগভাবে আরেকজন ব্যক্তির কাছে ক্ষমতা অর্পণ করেন। পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়।

যেহেতু পাওয়ার অব অ্যাটর্নি একটি আইনগত দলিল, কাজেই এটি অবশ্যই লিখিত হতে হবে এবং দেশে অবস্থানরত অবস্থায় প্রদান করার ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রি করতে হবে। বিদেশে থাকা অবস্থায় কোনো ব্যক্তি কাউকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে চাইলে তাঁকে প্রথমে একজন ভালো আইনজীবীর মাধ্যমে দলিলটি সঠিকভাবে ড্রাফট করাতে হবে। এরপর সেই দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে দলিলটি সম্পাদন ও প্রত্যয়ন করে পাঠাতে হবে। ওই দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসের কনস্যুলারের সামনে দলিলে সই করতে হবে। কনস্যুলারের মাধ্যমে সত্যায়িত হওয়ার পর ক্ষমতাদাতা তা ক্ষমতাগ্রহীতা বা আমমোক্তার বরাবরে পাঠিয়ে দেবেন। ওই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি পাওয়ার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক সত্যায়িত করতে হবে। পরে তা জেলা প্রশাসকের রাজস্ব কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। এরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বিদেশে সম্পাদিত আমমোক্তারনামা দলিলে বর্ণিত সম্পত্তিতে সরকারি কোনো স্বার্থ জড়িত আছে কি না, তা যাচাই করে দেখেন। একই সঙ্গে দাগ-সংক্রান্ত তথ্য প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর চিঠি প্রেরণ করবেন। আরেকটি চিঠি পাঠাতে হবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (কনস্যুলার) বরাবর।

জেলা প্রশাসকের রাজস্ব কার্যালয়ে সব তথ্য আসার পর সেখান থেকে সরকারকর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের স্ট্যাম্প লাগাতে হবে। এরপর সেখানে আমমোক্তারনামা দলিলের ওপর একটি নম্বর ও তারিখ পড়বে। এ রকম বিদেশি আমমোক্তারনামার সত্যতা যাচাই করতে হলে জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কার্যালয়ে গিয়ে ওই নম্বর দিয়ে যাচাই করে নেওয়া যায়। এরপর এই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সংশ্লিষ্ট সাবরেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

এই পদ্ধতিতে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রদান করলে বসতবাড়ি ডেভেলপারকে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আইনগত প্রতিবন্ধকতা থাকে না। আপনার বোন যদি আইনগত পদ্ধতি মেনে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে যাকে দেওয়া হয়েছে, তিনি আপনার বোনের পক্ষে তাঁর অনুপস্থিতিতেও সব ধরনের কাজ করতে পারবেন। তবে সেটা অবশ্যই পাওয়ার অব অ্যাটর্নিতে উল্লেখ করা থাকতে হবে। আপনি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলটি একজন আইনজীবীকে দেখিয়ে নিন। যদি তা ঠিক থাকে, সে ক্ষেত্রে আপনার বোনের অনুপস্থিতিতে সম্পত্তিগুলো ডেভেলপ ও সঠিক বণ্টন করার প্রক্রিয়ায় কোনো বাধা থাকার কথা নয়।

হোয়াইট হাউসের বিবৃতি বাংলাদেশের নতুন সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমর্থন অব্যাহত থাকবে: বাইডেন

 


ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈঠক নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে হোয়াইট হাউস। এতে বলা হয়, বৈঠকে বাইডেন বলেছেন, বাংলাদেশের নতুন সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে মার্কিন সমর্থন অব্যাহত থাকবে।

গতকাল মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি নিয়ে গতকালই হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি প্রচার করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হওয়ায় তাঁকে অভিনন্দন জানাতে গতকাল মঙ্গলবার তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে উভয় নেতা যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার ঘনিষ্ঠ অংশীদারত্বের বিষয়টি উল্লেখ করেন। আর এই সম্পর্কের মূলে রয়েছে পারস্পরিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও জনগণের মধ্যকার শক্তিশালী বন্ধন।

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট বাইডেন দুই সরকারের মধ্যে আরও সম্পৃক্ততাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের নতুন সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে মার্কিন সমর্থন অব্যাহত থাকবে।


রাজনীতি ঠিক না হলে ব্যাংক সংস্কার টেকসই হবে না

 

অর্থনীতি খারাপ হয়ে পড়লে সরকারের পতন হয়। বাংলাদেশেও তা–ই হয়েছে। অর্থনৈতিক নিষ্পেষণ, দুর্নীতি ও ভোটাধিকার হরণের কারণে সরকারের পতন হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে কিছু ভালো ব্যাংক দুর্বল হয়েছে। এক পরিবারের কাছে ৮-৯টি ব্যাংক তুলে দেওয়া হয়েছে। ৪-৫টি পরিবার ব্যাংক থেকে ২ লাখ কোটি টাকা নিয়ে গেছে। বিস্ফোরণোন্মুখ এই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা করে যাচ্ছে। টাকা ছাপানো বন্ধ, সঙ্গে বন্ধ রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিও। এই নীতি স্থিতিশীল হলে মূল্যস্ফীতি কমতে বাধ্য। এতে সবাই স্বস্তিতে থাকবে। ব্যাংক খাত সংস্কারে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে রাজনীতি ঠিক না হলে ব্যাংক খাতের সংস্কারগুলো টেকসই হবে না। সুতরাং সংস্কার উদ্যোগ টেকসই করতে হলে রাজনীতিতেও সংস্কার আনতে হবে।

প্রথম আলো আয়োজিত ‘ব্যাংক খাতকে কোথায় দেখতে চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ব্যাংকার, ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদেরা এ সময় ব্যাংক খাতের নানা অনিয়ম, সমস্যা, সমাধান এবং তা টেকসইয়ের উপায় তুলে ধরেন।

প্রথম আলো কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এই গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, ইস্টার্ণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী রেজা ইফতেখার, গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসেন, দি সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার, ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরী, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবীব, লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের এমডি হুমায়রা আজম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী।

আলোচনার শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এবং সঞ্চালনা করেন হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন।

প্রধান চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কাজ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, এ জন্য কোনো টাকা ছাপানো হচ্ছে না। শুধু পোশাকশ্রমিকদের বেতন দিতে এক হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। রিজার্ভ থেকেও ডলার বিক্রি করা হচ্ছে না। খোলাবাজারে ডলারের দাম ব্যাংকের চেয়ে কমে গেছে। এভাবে চললে বিনিময় হার স্থিতিশীল হয়ে যাবে। এখন যেসব ব্যাংকের টাকার প্রয়োজন হচ্ছে, তা না ছাপিয়ে অন্য ব্যাংক থেকে জোগান দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘মানুষের ক্ষোভ ও কষ্ট কমাতে পারলে সেটা বড় অর্জন হবে। টাকা ছাপিয়ে সাময়িক স্বস্তি মিললেও সমস্যার সমাধান হবে না। মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে। এ জন্য টাকা না ছাপানো ও ডলার বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ যথাযথ বলে মত দেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জায়গা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে, সেগুলো ঠিক আছে। তবে শিল্পের কথা ভাবা হয়নি। ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ৯ শতাংশ সুদে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করেছেন। এখন ব্যাংকঋণের সুদ সাড়ে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ। সুদের হার আরও বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা কীভাবে ঋণের অর্থ পরিশোধ করবেন, সেটি ভাবা উচিত ছিল।

এ কে আজাদ বলেন, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আকার কমানো হয়েছে। সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। ইডিএফ রপ্তানিকারকদের জন্য ভর্তুকি হিসেবে কাজ করছে। বিকল্প হিসেবে অফশোর ব্যাংকিং ব্যবস্থা থাকলে সবাই সেটি নিতে পারবে না। ফলে রপ্তানি কমতে পারে।

সুদহারের সঙ্গে বিনিয়োগের সম্পর্ক

ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয় হবে ঋণের সুদহার। ১৫ শতাংশ ব্যাংকসুদে শিল্পকারখানা করে সফল হওয়া কঠিন। সুদহার বাড়লে সেটা ব্যাংকারদের জন্য খুশির খবর। কারণ, তাতে সুদ আয় বাড়বে। কিন্তু এর ফলে খেলাপি ঋণও বেড়ে যাবে।

সুদহারের সঙ্গে বিনিয়োগের সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, স্বাধীনতার পর দেশের উদ্যোক্তা শ্রেণি তৈরি করেছে এই ব্যাংক খাত। কিন্তু এই খাত ধীরে ধীরে দুর্বল হয়েছে। সুদহারের কথা বলা হয়; এটা অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। কিন্তু সুদহারের সঙ্গে বিনিয়োগের সম্পর্ক তেমন একটা দেখা যায় না। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে অনেক ধরনের উদার নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে, তাতেও বিশেষ কাজ হয়নি; বরং একধরনের দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা দুর্বৃত্তায়নমুক্ত, সচল ও টেকসই ব্যাংকিং খাত দেখতে চাই। স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপ দরকার। স্বল্প মেয়াদে বা তাৎক্ষণিকভাবে অনেকটা অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

এই প্রসঙ্গে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ৬-৯ সুদহার করেও বিনিয়োগ বাড়ানো যায়নি। এ জন্য সব লেনদেন বাজারভিত্তিক করা হচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা না ফিরলে বিনিয়োগ হবে না। এ জন্য ছয় মাস সময় দিতে হবে। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের আকার কমানো হবে না। আরও এক বিলিয়ন ডলার যুক্ত হবে।

গভর্নর বলেন, ‘সরকার ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা ধার নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এটাকে ৮০-৮৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনতে বলেছি। ফলে বেসরকারি খাত ৫০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি ঋণ নিতে পারবে।’

খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গ

বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসেন বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আমাদের জন্য আরেকটি সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে, তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমানে যে খেলাপি ঋণের কথা বলা হচ্ছে, সেটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে ঐকমত্যে আসতে হবে।’

বিআইবিএমের অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবীব বলেন, পৃথিবীর এমন কোনো ব্যাংক নেই, যেখানে খেলাপি ঋণ নেই। ইচ্ছাকৃত খেলাপি খারাপ। যারা অনিচ্ছাকৃত খেলাপি, তাদের সহায়তা করতে হবে, আর যারা ইচ্ছাকৃত তাদের শাস্তি দেওয়া, জেলে নিতে হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা ঠিক করতে হবে।

মো. আহসান হাবীব বলেন, খেলাপি ঋণ বেশি হয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ঋণ থেকে। কারণ, এ ধরনের বাণিজ্যের সব তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক সংগ্রহ করে না। এর সূত্রপাত হয় ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র থেকে। এই বাণিজ্যেই ৭০-৮০ শতাংশ জালিয়াতি ও অর্থ পাচার হয়।

ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক বেশি। আমরা যেসব প্রতিষ্ঠানকে অর্থায়ন করি, তাদের বেশির ভাগই ঋণ ফেরত দিতে নানা সমস্যায় পড়ে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কারণে কর্মমূল্যায়ন বিবেচনায় ব্যাংকে চাকরিচ্যুত করা যায় না।’

রোমো রউফ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যাংকিং নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমাদের আশপাশের দেশ ও অঞ্চলের চর্চাগুলোকে আমরা বিবেচনায় নিতে পারি। অনেক সময় দেখা যায়, বিভিন্ন খাতের ভালো ও সফল উদ্যোক্তারা ব্যাংকের পরিচালনায় এসে আর ভালো কিছু করতে পারেন না। এর বড় কারণ রাজনৈতিক চাপ। এ ছাড়া বৈরী পরিবেশ ও নীতিও বড় কারণ। এমন একটি ব্যবস্থা করা দরকার, শুধু টাকা থাকলেই যে কেউ যাতে ব্যাংকের মালিকানায় চলে আসতে না পারে।’

ব্যাংক খাতে রাজনীতি

সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা রাজনৈতিক হেনস্তার শিকার। ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও পর্ষদ সদস্য হিসেবেও হেনস্তার শিকার হয়েছি। রাজনৈতিকভাবে কেউ কেউ এমন সুবিধা পেতেন যে আমরা প্রতিযোগিতা সক্ষম থাকতাম না। রাজনৈতিকভাবে সুবিধা পাওয়া একটি পরিবার আট-নয়টি ব্যাংকের মালিকানা পেয়েছে। সেটি কীভাবে সম্ভব? অথচ আমাদের বলা হচ্ছে, ব্যাংকে একটি পরিবারের শেয়ার ১০ শতাংশের বেশি হতে পারব না।’

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, রাজনৈতিক কারণে কিছু ভালো ব্যাংক দুর্বল হয়েছে। কিছু ব্যাংকের উদ্দেশ্য ভালো ছিল, কিন্তু নানা কারণে দুর্বল হয়েছে। এ জন্য ব্যাংকের পূর্বাবস্থা যাচাই–বাছাই করে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। একটু সহায়তা দিলে কিছু ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াবে। তাই ব্যাংক খাত সংস্কারে সময়ক্ষেপণ করা উচিত হবে না। ব্যাংক খাতের ক্ষতির প্রভাব পড়েছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে।

আবদুল মান্নান বলেন, ‘সাত বছর আগে ব্যাংক খাত যে অবস্থায় দেখেছি, সাত বছর পর এসে সেই অবস্থায় নেই। ব্যাংক চলেছে মুদিদোকানের মতো। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই পর্যন্ত ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ পরিবর্তন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সাহসী সিদ্ধান্তগুলোয় আশ্বস্ত হচ্ছি।’

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘অর্থনীতি খারাপ হয়ে পড়লে সরকার পতন হয়। বাংলাদেশেও তা–ই হয়েছে। অর্থনৈতিক নিষ্পেষণ, দুর্নীতি ও ভোটাধিকার হরণের কারণে সরকার পতন হয়েছে। বিস্ফোরণোন্মুখ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক আর্থিক সংকটে আমাদের সমস্যা হয়নি, আমরা ভাগ্যবান। ৪–৫টি পরিবার ব্যাংক থেকে ২ লাখ কোটি টাকা নিয়ে গেছে। এতে অর্থনীতিতে মন্দা নেমে আসতে পারত, সেটা হয়নি। রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করলে ছয় মাস পর শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হয়ে যাবে। এটা কোনো সমাধান হতে পারে না। এ জন্য আমাদের কিছুদিন কষ্ট করতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুশাদ ফরিদী বলেন, ব্যাংক খাত রুগ্‌ণ হয়ে পড়েছে। মানুষের মনে একধরনের ভীতি আছে। অনেকেই জানতে চান, কোন ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ? নতুন সরকার আসার পর মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হলেও অনিশ্চয়তার বোধ এখনো আছে। সে জন্য বিষয়টি পরিষ্কার করা দরকার। রুগ্‌ণ ব্যাংক টিকিয়ে রাখা হলে ভালো ব্যাংকেও তার প্রভাব পড়ে। এই খাত মানুষের আস্থার ওপর দাঁড়িয়ে আছে।

সংস্কার কত দূর

বিআইডিএসের মনজুর হোসেন বলেন, গত এক দশকে করপোরেট সুশাসনের কাঠামোয় অনেক ক্ষতি করা হয়েছে। এ সময়ে ব্যাংক কোম্পানি আইনে কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়েছে। এ পরিবর্তন হয়েছে স্বজনতোষী ও ঋণখেলাপিদের সুবিধা দেওয়ার জন্য। অন্তর্বর্তী সরকার এ ক্ষেত্রে কতটা কাজ করতে পারবে, তা দেখার বিষয়; তবে সংস্কার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

আলোচনায় গভর্নর বলেন, ‘আর্থিক খাতে সমস্যা কী, সেটা আমরা জানি—এ জন্য কমিশন না করে কাজ শুরু করে দিয়েছি। এ জন্য তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে, ইতিমধ্যে একটা গঠন করা হয়েছে। ১০-১১ ব্যাংকের পর্ষদ পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। এসব ব্যাংককে নিবিড়ভাবে তদারকি করা হচ্ছে। স্বস্তির বিষয়, এত কিছুর পরও এসব ব্যাংকে ৮০০ কোটি টাকা আমানত বেড়েছে। মানুষ এখন এসব ব্যাংকে টাকা জমা করছে।’

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে এসব ব্যাংককে কীভাবে সহায়তা দেওয়া যায়, তা দেখছি। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের সহায়তা প্রয়োজন হবে না। ফলে সহায়তার আকার অর্ধেক কমে গেছে। এসব ব্যাংকের আমানতকারীরা ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছেন। এক বছর সময় দিলে এসব ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াবে। গ্রাহকেরা অপ্রয়োজনে টাকা উত্তোলন করতে গেলে সমস্যা বাড়বে। দুর্বল ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা দেখে কত টাকার গ্যারান্টি সুবিধা পাবে, তা নির্ধারণ করা হচ্ছে। গ্যারান্টি দিলেও পুরো টাকা একবারে দেওয়া হবে না। এই মডেলে কাজ না হলে অন্য উপায় ভাবতে হবে।’

গভর্নর বলেন, শেয়ার বিক্রি করে দুর্বল ব্যাংকের টাকা আদায়ের চেষ্টা করা হবে। এ ছাড়া সরকার ও বিদেশি সংস্থা থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা মূলধন জোগানোর পরিকল্পনা আছে। তবে রাজনীতি সংস্কার না হলে অর্থনীতির সংস্কার টেকসই হবে না।

দুর্বল ব্যাংককে তারল্য–সহায়তা প্রসঙ্গে ইস্টার্ণ ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ‘আমরা অবশ্যই দুর্বল ব্যাংককে সাহায্য করতে চাই। কিন্তু আমাদের ব্যাংককে যখন বিদেশি কোনো সংস্থা নিরীক্ষা করতে আসবে, তখন যদি দেখে কোনো তথ্য–উপাত্ত ছাড়াই দুর্বল ব্যাংককে ঋণ দিয়েছি; তাহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। কোনো ব্যাংক অর্থ ফেরত দিতে না পারলে গ্যারান্টার হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যাব। এটা আমার কাছে খুবই বিব্রতকর হবে যে আমি অর্থ ফেরত চাইতে আমার নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্বারস্থ হচ্ছি।’

আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনের খসড়া রাতের আঁধারে চূড়ান্ত করা হয়েছে। আইনটি আরও সংশোধন করে সমৃদ্ধ করা যায়।

লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের এমডি হুমায়রা আজম বলেন, যদি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভালো হয় আর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ভালো না হয়, তাহলে সুশাসন নিশ্চিত করা যাবে না। এই যে এতগুলো ব্যাংকে লুটপাট হয়ে গেল, সেখানে এমডিরা কী করেছেন? তাঁদের সততা কোথায় ছিল? বর্তমানে ব্যাংক খাত যে অবস্থায় আছে, তাতে কিছু ব্যাংকের জন্য লভ্যাংশ বিতরণ কয়েক বছরের জন্য বন্ধ করে দেওয়া দরকার। এ ছাড়া ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতেও বড় ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। এই খাতের জন্য আলাদা কিছু নীতিও দরকার, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো ভালোভাবে টিকে থাকতে পারে।