অর্থনীতি খারাপ হয়ে পড়লে সরকারের পতন হয়। বাংলাদেশেও তা–ই হয়েছে। অর্থনৈতিক নিষ্পেষণ, দুর্নীতি ও ভোটাধিকার হরণের কারণে সরকারের পতন হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে কিছু ভালো ব্যাংক দুর্বল হয়েছে। এক পরিবারের কাছে ৮-৯টি ব্যাংক তুলে দেওয়া হয়েছে। ৪-৫টি পরিবার ব্যাংক থেকে ২ লাখ কোটি টাকা নিয়ে গেছে। বিস্ফোরণোন্মুখ এই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা করে যাচ্ছে। টাকা ছাপানো বন্ধ, সঙ্গে বন্ধ রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিও। এই নীতি স্থিতিশীল হলে মূল্যস্ফীতি কমতে বাধ্য। এতে সবাই স্বস্তিতে থাকবে। ব্যাংক খাত সংস্কারে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে রাজনীতি ঠিক না হলে ব্যাংক খাতের সংস্কারগুলো টেকসই হবে না। সুতরাং সংস্কার উদ্যোগ টেকসই করতে হলে রাজনীতিতেও সংস্কার আনতে হবে।
প্রথম আলো আয়োজিত ‘ব্যাংক খাতকে কোথায় দেখতে চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ব্যাংকার, ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদেরা এ সময় ব্যাংক খাতের নানা অনিয়ম, সমস্যা, সমাধান এবং তা টেকসইয়ের উপায় তুলে ধরেন।
প্রথম আলো কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এই গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, ইস্টার্ণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী রেজা ইফতেখার, গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসেন, দি সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার, ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরী, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবীব, লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের এমডি হুমায়রা আজম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী।
আলোচনার শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এবং সঞ্চালনা করেন হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন।
প্রধান চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কাজ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, এ জন্য কোনো টাকা ছাপানো হচ্ছে না। শুধু পোশাকশ্রমিকদের বেতন দিতে এক হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। রিজার্ভ থেকেও ডলার বিক্রি করা হচ্ছে না। খোলাবাজারে ডলারের দাম ব্যাংকের চেয়ে কমে গেছে। এভাবে চললে বিনিময় হার স্থিতিশীল হয়ে যাবে। এখন যেসব ব্যাংকের টাকার প্রয়োজন হচ্ছে, তা না ছাপিয়ে অন্য ব্যাংক থেকে জোগান দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘মানুষের ক্ষোভ ও কষ্ট কমাতে পারলে সেটা বড় অর্জন হবে। টাকা ছাপিয়ে সাময়িক স্বস্তি মিললেও সমস্যার সমাধান হবে না। মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে। এ জন্য টাকা না ছাপানো ও ডলার বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ যথাযথ বলে মত দেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জায়গা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে, সেগুলো ঠিক আছে। তবে শিল্পের কথা ভাবা হয়নি। ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ৯ শতাংশ সুদে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করেছেন। এখন ব্যাংকঋণের সুদ সাড়ে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ। সুদের হার আরও বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা কীভাবে ঋণের অর্থ পরিশোধ করবেন, সেটি ভাবা উচিত ছিল।
এ কে আজাদ বলেন, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আকার কমানো হয়েছে। সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। ইডিএফ রপ্তানিকারকদের জন্য ভর্তুকি হিসেবে কাজ করছে। বিকল্প হিসেবে অফশোর ব্যাংকিং ব্যবস্থা থাকলে সবাই সেটি নিতে পারবে না। ফলে রপ্তানি কমতে পারে।
সুদহারের সঙ্গে বিনিয়োগের সম্পর্ক
ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয় হবে ঋণের সুদহার। ১৫ শতাংশ ব্যাংকসুদে শিল্পকারখানা করে সফল হওয়া কঠিন। সুদহার বাড়লে সেটা ব্যাংকারদের জন্য খুশির খবর। কারণ, তাতে সুদ আয় বাড়বে। কিন্তু এর ফলে খেলাপি ঋণও বেড়ে যাবে।
সুদহারের সঙ্গে বিনিয়োগের সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, স্বাধীনতার পর দেশের উদ্যোক্তা শ্রেণি তৈরি করেছে এই ব্যাংক খাত। কিন্তু এই খাত ধীরে ধীরে দুর্বল হয়েছে। সুদহারের কথা বলা হয়; এটা অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। কিন্তু সুদহারের সঙ্গে বিনিয়োগের সম্পর্ক তেমন একটা দেখা যায় না। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে অনেক ধরনের উদার নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে, তাতেও বিশেষ কাজ হয়নি; বরং একধরনের দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা দুর্বৃত্তায়নমুক্ত, সচল ও টেকসই ব্যাংকিং খাত দেখতে চাই। স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপ দরকার। স্বল্প মেয়াদে বা তাৎক্ষণিকভাবে অনেকটা অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
এই প্রসঙ্গে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ৬-৯ সুদহার করেও বিনিয়োগ বাড়ানো যায়নি। এ জন্য সব লেনদেন বাজারভিত্তিক করা হচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা না ফিরলে বিনিয়োগ হবে না। এ জন্য ছয় মাস সময় দিতে হবে। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের আকার কমানো হবে না। আরও এক বিলিয়ন ডলার যুক্ত হবে।
গভর্নর বলেন, ‘সরকার ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা ধার নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এটাকে ৮০-৮৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনতে বলেছি। ফলে বেসরকারি খাত ৫০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি ঋণ নিতে পারবে।’
খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গ
বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসেন বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আমাদের জন্য আরেকটি সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে, তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমানে যে খেলাপি ঋণের কথা বলা হচ্ছে, সেটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে ঐকমত্যে আসতে হবে।’
বিআইবিএমের অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবীব বলেন, পৃথিবীর এমন কোনো ব্যাংক নেই, যেখানে খেলাপি ঋণ নেই। ইচ্ছাকৃত খেলাপি খারাপ। যারা অনিচ্ছাকৃত খেলাপি, তাদের সহায়তা করতে হবে, আর যারা ইচ্ছাকৃত তাদের শাস্তি দেওয়া, জেলে নিতে হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা ঠিক করতে হবে।
মো. আহসান হাবীব বলেন, খেলাপি ঋণ বেশি হয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ঋণ থেকে। কারণ, এ ধরনের বাণিজ্যের সব তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক সংগ্রহ করে না। এর সূত্রপাত হয় ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র থেকে। এই বাণিজ্যেই ৭০-৮০ শতাংশ জালিয়াতি ও অর্থ পাচার হয়।
ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক বেশি। আমরা যেসব প্রতিষ্ঠানকে অর্থায়ন করি, তাদের বেশির ভাগই ঋণ ফেরত দিতে নানা সমস্যায় পড়ে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কারণে কর্মমূল্যায়ন বিবেচনায় ব্যাংকে চাকরিচ্যুত করা যায় না।’
রোমো রউফ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যাংকিং নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমাদের আশপাশের দেশ ও অঞ্চলের চর্চাগুলোকে আমরা বিবেচনায় নিতে পারি। অনেক সময় দেখা যায়, বিভিন্ন খাতের ভালো ও সফল উদ্যোক্তারা ব্যাংকের পরিচালনায় এসে আর ভালো কিছু করতে পারেন না। এর বড় কারণ রাজনৈতিক চাপ। এ ছাড়া বৈরী পরিবেশ ও নীতিও বড় কারণ। এমন একটি ব্যবস্থা করা দরকার, শুধু টাকা থাকলেই যে কেউ যাতে ব্যাংকের মালিকানায় চলে আসতে না পারে।’
ব্যাংক খাতে রাজনীতি
সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা রাজনৈতিক হেনস্তার শিকার। ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও পর্ষদ সদস্য হিসেবেও হেনস্তার শিকার হয়েছি। রাজনৈতিকভাবে কেউ কেউ এমন সুবিধা পেতেন যে আমরা প্রতিযোগিতা সক্ষম থাকতাম না। রাজনৈতিকভাবে সুবিধা পাওয়া একটি পরিবার আট-নয়টি ব্যাংকের মালিকানা পেয়েছে। সেটি কীভাবে সম্ভব? অথচ আমাদের বলা হচ্ছে, ব্যাংকে একটি পরিবারের শেয়ার ১০ শতাংশের বেশি হতে পারব না।’
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, রাজনৈতিক কারণে কিছু ভালো ব্যাংক দুর্বল হয়েছে। কিছু ব্যাংকের উদ্দেশ্য ভালো ছিল, কিন্তু নানা কারণে দুর্বল হয়েছে। এ জন্য ব্যাংকের পূর্বাবস্থা যাচাই–বাছাই করে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। একটু সহায়তা দিলে কিছু ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াবে। তাই ব্যাংক খাত সংস্কারে সময়ক্ষেপণ করা উচিত হবে না। ব্যাংক খাতের ক্ষতির প্রভাব পড়েছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে।
আবদুল মান্নান বলেন, ‘সাত বছর আগে ব্যাংক খাত যে অবস্থায় দেখেছি, সাত বছর পর এসে সেই অবস্থায় নেই। ব্যাংক চলেছে মুদিদোকানের মতো। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই পর্যন্ত ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ পরিবর্তন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সাহসী সিদ্ধান্তগুলোয় আশ্বস্ত হচ্ছি।’
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘অর্থনীতি খারাপ হয়ে পড়লে সরকার পতন হয়। বাংলাদেশেও তা–ই হয়েছে। অর্থনৈতিক নিষ্পেষণ, দুর্নীতি ও ভোটাধিকার হরণের কারণে সরকার পতন হয়েছে। বিস্ফোরণোন্মুখ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক আর্থিক সংকটে আমাদের সমস্যা হয়নি, আমরা ভাগ্যবান। ৪–৫টি পরিবার ব্যাংক থেকে ২ লাখ কোটি টাকা নিয়ে গেছে। এতে অর্থনীতিতে মন্দা নেমে আসতে পারত, সেটা হয়নি। রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করলে ছয় মাস পর শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হয়ে যাবে। এটা কোনো সমাধান হতে পারে না। এ জন্য আমাদের কিছুদিন কষ্ট করতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুশাদ ফরিদী বলেন, ব্যাংক খাত রুগ্ণ হয়ে পড়েছে। মানুষের মনে একধরনের ভীতি আছে। অনেকেই জানতে চান, কোন ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ? নতুন সরকার আসার পর মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হলেও অনিশ্চয়তার বোধ এখনো আছে। সে জন্য বিষয়টি পরিষ্কার করা দরকার। রুগ্ণ ব্যাংক টিকিয়ে রাখা হলে ভালো ব্যাংকেও তার প্রভাব পড়ে। এই খাত মানুষের আস্থার ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
সংস্কার কত দূর
বিআইডিএসের মনজুর হোসেন বলেন, গত এক দশকে করপোরেট সুশাসনের কাঠামোয় অনেক ক্ষতি করা হয়েছে। এ সময়ে ব্যাংক কোম্পানি আইনে কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়েছে। এ পরিবর্তন হয়েছে স্বজনতোষী ও ঋণখেলাপিদের সুবিধা দেওয়ার জন্য। অন্তর্বর্তী সরকার এ ক্ষেত্রে কতটা কাজ করতে পারবে, তা দেখার বিষয়; তবে সংস্কার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
আলোচনায় গভর্নর বলেন, ‘আর্থিক খাতে সমস্যা কী, সেটা আমরা জানি—এ জন্য কমিশন না করে কাজ শুরু করে দিয়েছি। এ জন্য তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে, ইতিমধ্যে একটা গঠন করা হয়েছে। ১০-১১ ব্যাংকের পর্ষদ পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। এসব ব্যাংককে নিবিড়ভাবে তদারকি করা হচ্ছে। স্বস্তির বিষয়, এত কিছুর পরও এসব ব্যাংকে ৮০০ কোটি টাকা আমানত বেড়েছে। মানুষ এখন এসব ব্যাংকে টাকা জমা করছে।’
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে এসব ব্যাংককে কীভাবে সহায়তা দেওয়া যায়, তা দেখছি। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের সহায়তা প্রয়োজন হবে না। ফলে সহায়তার আকার অর্ধেক কমে গেছে। এসব ব্যাংকের আমানতকারীরা ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছেন। এক বছর সময় দিলে এসব ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াবে। গ্রাহকেরা অপ্রয়োজনে টাকা উত্তোলন করতে গেলে সমস্যা বাড়বে। দুর্বল ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা দেখে কত টাকার গ্যারান্টি সুবিধা পাবে, তা নির্ধারণ করা হচ্ছে। গ্যারান্টি দিলেও পুরো টাকা একবারে দেওয়া হবে না। এই মডেলে কাজ না হলে অন্য উপায় ভাবতে হবে।’
গভর্নর বলেন, শেয়ার বিক্রি করে দুর্বল ব্যাংকের টাকা আদায়ের চেষ্টা করা হবে। এ ছাড়া সরকার ও বিদেশি সংস্থা থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা মূলধন জোগানোর পরিকল্পনা আছে। তবে রাজনীতি সংস্কার না হলে অর্থনীতির সংস্কার টেকসই হবে না।
দুর্বল ব্যাংককে তারল্য–সহায়তা প্রসঙ্গে ইস্টার্ণ ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ‘আমরা অবশ্যই দুর্বল ব্যাংককে সাহায্য করতে চাই। কিন্তু আমাদের ব্যাংককে যখন বিদেশি কোনো সংস্থা নিরীক্ষা করতে আসবে, তখন যদি দেখে কোনো তথ্য–উপাত্ত ছাড়াই দুর্বল ব্যাংককে ঋণ দিয়েছি; তাহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। কোনো ব্যাংক অর্থ ফেরত দিতে না পারলে গ্যারান্টার হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যাব। এটা আমার কাছে খুবই বিব্রতকর হবে যে আমি অর্থ ফেরত চাইতে আমার নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্বারস্থ হচ্ছি।’
আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনের খসড়া রাতের আঁধারে চূড়ান্ত করা হয়েছে। আইনটি আরও সংশোধন করে সমৃদ্ধ করা যায়।
লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের এমডি হুমায়রা আজম বলেন, যদি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভালো হয় আর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ভালো না হয়, তাহলে সুশাসন নিশ্চিত করা যাবে না। এই যে এতগুলো ব্যাংকে লুটপাট হয়ে গেল, সেখানে এমডিরা কী করেছেন? তাঁদের সততা কোথায় ছিল? বর্তমানে ব্যাংক খাত যে অবস্থায় আছে, তাতে কিছু ব্যাংকের জন্য লভ্যাংশ বিতরণ কয়েক বছরের জন্য বন্ধ করে দেওয়া দরকার। এ ছাড়া ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতেও বড় ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। এই খাতের জন্য আলাদা কিছু নীতিও দরকার, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো ভালোভাবে টিকে থাকতে পারে।
0 Comments