Tuesday, May 14, 2024

ডলার-সংকট ঠেকানো যাচ্ছে না রিজার্ভের পতন


 দুই বছর আগে দেশে শুরু হওয়া ডলারের সংকট কাটছে না। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বাড়াতে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো রিজার্ভ বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। ডলারের সংকট না কাটায় রিজার্ভের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না; বরং প্রায় প্রতিনিয়তই কমছে রিজার্ভ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। 

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) মার্চ ও এপ্রিল মাসের দায় মেটানোর পর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে মোট রিজার্ভ কমে ২৩ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৩৭৭ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ১৮ দশমিক ৩২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৮৩২ কোটি ডলার। তবে প্রকৃত বা দায়হীন রিজার্ভ এখন ১৩ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের কিছুটা কম বলে জানা গেছে। প্রকৃত রিজার্ভ সেটাই, যার বিপরীতে কোনো দায় নেই এবং যেকোনো সময় তা ব্যবহার করা যায়। 

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এখন আমদানি নিয়ন্ত্রণের পরও প্রতি মাসে আমদানি দায় মেটানোর জন্য গড়ে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার প্রয়োজন হচ্ছে। ফলে প্রকৃত রিজার্ভের অর্থ দিয়ে তিন মাসেরও আমদানি খরচ মেটানো যাবে না।

অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত আশঙ্কাজনক পর্যায়ে নেমেছে। বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার জন্য ভালো পরিমাণ রিজার্ভ থাকা জরুরি। এখন রিজার্ভ যে পর্যায়ে নেমে এসেছে, তা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কার কারণ আছে। কারণ, এই রিজার্ভ দিয়ে দেশের তিন মাসেরও আমদানি দায় মেটানো যাবে না। ভারতের ১২-১৩ মাস ও ভিয়েতনামের ৭-৮ মাসের আমদানি দায় মেটানোর মতো রিজার্ভ আছে।

জাহিদ হোসেন আরও বলেন, আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে দেশের কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব না। উৎপাদন বাড়িয়ে ভালো জিডিপি অর্জন করতে যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি বাড়াতে হবে। এ জন্য আমদানি ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে। 

আরও পড়ুন

রিজার্ভ কমল কীভাবে 

জানা গেছে, গত সপ্তাহে আকু (এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন) বিল বাবদ রিজার্ভ থেকে ১৬৩ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়। ফলে রিজার্ভ আরও কমে যায়। 

আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া নিট বা প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ১১ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের অনুরোধের পর আইএমএফ এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১ হাজার ৪৭৫ কোটি ডলারে নামিয়েছে। তবে প্রকৃত এই রিজার্ভ এখন ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের কম। ফলে এখনো লক্ষ্য অর্জনের বেশ দূরে রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত মজুত। 

২০২১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের মোট রিজার্ভ ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবেই যা এখন কমে হয়েছে ২ হাজার ৩৭৭ কোটি ডলার। ফলে আড়াই বছরে রিজার্ভ কমে অর্ধেক হয়েছে।

ডলারের দাম একসময় নির্ধারণ করত কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর ব্যাংক খাত–সংশ্লিষ্ট দুটি প্রতিষ্ঠানকে বিনিময় হার নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার পর ডলারের দাম নির্ধারণে এবার ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ডলারের দাম ক্রলিং বা ওঠানামা করার সুযোগ রাখেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনে ৯০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। ক্রলিং পেগ চালু করে ডলারের দাম বাড়িয়ে ১১৭ টাকা করা হয়েছে, এ বাস্তবতায় প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়বে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ডলারের দাম বাড়ায় রপ্তানি আয় আসাও বাড়বে বলে কর্মকর্তারা মনে করেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন সরকারি আমদানি দায় মেটানোর জন্য প্রতি ডলার ১১৭ টাকা ৪৪ পয়সা দরে বিক্রি করছে। আবার যেসব ব্যাংক বেশি দামে প্রবাসী আয় কিনছে, তাদের ডলার বাংলাদেশ ব্যাংক ১১৭ টাকা ৪৪ পয়সা দরে কিনে নিচ্ছে। এরপরও রিজার্ভের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। যে পরিমাণ ডলার বিক্রি করা হচ্ছে, কেনা হচ্ছে তার চেয়ে কম। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত দুই মাসে ১৬৩ কোটি ডলার আমদানি বিল পরিশোধ করেছে। ফলে রিজার্ভ কিছুটা কমেছে। সামনের মাসে আইএমএফের ঋণের কিস্তি আসবে। এ ছাড়া জুনের মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থছাড় হবে। তিনি আশা করেন, প্রবাসী আয় চলতি মাসে ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। ডলারের প্রবাহ বাড়ার কারণে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির চাপও কমে আসবে। 

আরও পড়ুন

আর্থিক হিসাবেও বড় ঘাটতি 

এদিকে দেশের আর্থিক হিসাবে ঘাটতি ৯ বিলিয়ন বা ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ প্রান্তিকে ঘাটতির পরিমাণ ৯২৫ কোটি ডলারে উঠেছে। এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি ছিল ৪০৯ কোটি ডলার।

একটি দেশের আন্তর্জাতিক সম্পদের মালিকানা হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়টি পরিমাপ করা হয় আর্থিক হিসাবের মাধ্যমে। সাধারণত এই হিসাবে ঘাটতি তৈরি হলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের ওপর চাপ বৃদ্ধি পায়। ডলার-সংকট তীব্র হয়ে ওঠায় দেড় দশকের মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুতে প্রথমবারের মতো এ হিসাবে ঘাটতি দেখা দেয়।

বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়াসহ কয়েকটি কারণে ঘাটতি বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে। যেমন প্রবাসীরা পুঁজিবাজার বা অন্য খাতে আগের চেয়ে কম বিনিয়োগ করছেন এবং কিছু ক্ষেত্রে বিনিয়োগ উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হচ্ছে, তার বিপরীতে দেশে আয় আসা কমেছে।

আরও পড়ুন

আর্থিক হিসাবের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), পোর্টফোলিও বিনিয়োগ, অন্যান্য বিনিয়োগ ও রিজার্ভ অ্যাসেট বিবেচনা করা হয়ে থাকে। অন্যান্য বিনিয়োগের মধ্যে রয়েছে বৈদেশিক সহায়তা, সরকারের মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ, ঋণের কিস্তি পরিশোধ, দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি বাণিজ্যিক ঋণ, ট্রেড ক্রেডিট বা রপ্তানির বিপরীতে প্রত্যাবসিত অর্থ এবং অন্যান্য সম্পদ ও দায়।

ডলারের দামকে পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়ে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, সময়মতো ডলারের দাম বাজারভিত্তিক না করা ও পুরো রপ্তানি আয় দেশে না আসায় সংকট যাচ্ছে না। বাণিজ্যঘাটতি কাটছে না, আর্থিক হিসাবেও ঘাটতি বাড়ছে। ফলে ডলার–সংকট কাটছে না ও রিজার্ভের পতন হচ্ছেই। ডলারের দাম নির্ধারণে যে ধরনের নীতি নেওয়া হয়েছে, তার কোনোটাই টেকসই হচ্ছে না। এখন নতুন পদ্ধতিও বাজারভিত্তিক না। ডলারকে চাহিদা-জোগানের সঙ্গে ওঠানামা করতে দিতে হবে। ব্যাংকগুলোকে প্রতিদিন দামের ঘোষণা দিতে হবে, এতে গ্রাহকেরা পরিষ্কার ধারণা পাবেন। ডলার–সংকট নিরসনে একটি পথনকশা করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা মেনে সংকট নিরসন হবে। 

আরও পড়ুন

নতুন পদ্ধতি কাজে দেবে কি

ডলার-সংকটের মধ্যে আর্থিক হিসাব ও চলতি হিসাবে ঘাটতি হওয়ায় ২০২২ সালের জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে ঋণ চায় বাংলাদেশ। ছয় মাস পর সংস্থাটি গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে। এর তিন দিনের মাথায় ২ ফেব্রুয়ারি ঋণের প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ও গত ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। ঋণের তৃতীয় কিস্তি বাবদ ১১৫ কোটি ডলার আগামী মাসে আসবে বলে কথা রয়েছে।

আইএমএফের ঋণের শর্ত মেনে গত সপ্তাহে ডলারের মধ্যবর্তী দাম ১১৭ টাকা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক; আগে যা ছিল ১১০ টাকা। ঋণের সুদহারও বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। তবে এসব পদক্ষেপের পরও সংকট কাটবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান অর্থনীতিবিদেরা। 

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ডলারের দামের যে পদ্ধতি চালু হয়েছে, তাকে ক্রলিং পেগ বলা হলেও তা ক্রল (ওঠানামা) করছে না। এখন কঠিন সময়ে সঠিক নীতিমালা নিয়ে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। ডলারের দাম যেন ধীরে ধীরে বাড়তে ও কমতে পারে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বিমুখী আচরণ করার সুযোগ শেষ হয়ে এসেছে। পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের সুদহারও পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার সুযোগ দিতে হবে। তাহলে রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে।


Monday, May 13, 2024

নামেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, লেখাপড়া যা–তা ৪২টি মাদ্রাসা থেকে কেউ পাস করেনি। ৯টি বিদ্যালয় থেকে কেউ পাস করেনি। ২,৯৬৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সবাই পাস।


 

দুই বছর আগে ঝড়ে টিনশেড ভবন ভেঙে যায়। এরপর আর ভবন নির্মাণ করা হয়নি। পটুয়াখালীর বাউফলের উত্তর কেশবপুর বালিকা দাখিল মাদ্রাসাটি এখন কেবল কাগজে আছে, বাস্তবে এর কোনো কাঠামো নেই। ১৯৮৮ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত। তবে এমপিওভুক্ত নয়। এই মাদ্রাসা থেকে এবার একজন দাখিল পরীক্ষা দিলেও পাস করেনি।

মাদ্রাসার শিক্ষক মোছা. লতুফা বেগম বলেন, মাদ্রাসাটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য এ বছর একজনকে দিয়ে পরীক্ষার ফরম পূরণ করিয়েছিলেন।

তবে একই উপজেলার উত্তর দাশপাড়া দাখিল মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত। কিন্তু এই মাদ্রাসা থেকে ১৪ জন পরীক্ষা দিলেও কেউ পাস করেনি।

শুধু এই দুই মাদ্রাসা নয়, গত রোববার প্রকাশিত এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারা দেশ থেকে বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা মিলিয়ে ৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি। এর মধ্যে ৪২টি মাদ্রাসা, ৯টি বিদ্যালয়।

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই মফস্‌সলের। আছে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানও।

এ বছরসহ গত কয়েক বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রতিবছরই বেশ কিছুসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করতে পারছে না। শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশির ভাগই মাদ্রাসা। এ ছাড়া এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই মফস্‌সল এলাকার। হাতে গোনা শিক্ষার্থী নিয়ে নামকাওয়াস্তে চলে এসব প্রতিষ্ঠান। সুযোগ-সুবিধাও অপ্রতুল। এগুলোর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকিগুলো এমপিওভুক্ত নয়। তবে কিছু এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকেও শূন্য পাস হচ্ছে।

শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকদের মূল্যায়ন হলো এসব প্রতিষ্ঠানে ঠিকমতো পড়াশোনা হয় না। তাই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার প্রয়োজন আছে কি না, ভাবতে হবে।

আরও পড়ুন

অবশ্য শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিপক্ষে। গত রোববার ফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানে যদি শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আরও বেশি সহযোগিতা করতে হবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যদি কাম্য শিক্ষার্থী সংখ্যা ধরে রাখতে না পারে, তবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখা যাবে না।

নামেই বিদ্যালয়

এবার যে নয়টি বিদ্যালয় থেকে এবার একজনও পাস করতে পারেনি, তার মধ্যে তিনটি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন। এগুলোর সবগুলোই মফস্‌সলের। এর মধ্যে সোমজানি উচ্চবিদ্যালয়টি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় অবস্থিত। এখান থেকে তিনজন পরীক্ষা দিয়ে সবাই ফেল করেছে। ৩০ বছর আগে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হলেও দীর্ঘদিনেও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ে আসেন না।

গতকাল সোমবার বেলা দুইটার দিকে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের টিনের ঘরে তালা। ছাত্র–শিক্ষক কেউ নেই। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক মুঠোফোনে বলেন, বিনা বেতনে শিক্ষকেরা থাকতে চান না।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস হয় না। দু-চারজন শিক্ষার্থী এলেও শিক্ষকেরা আসেন না। স্থানীয় কয়েকজন যুবককে পাঠদানের জন্য নেওয়া হয়েছে।

কোনো প্রতিষ্ঠানে যদি শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আরও বেশি সহযোগিতা করতে হবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যদি কাম্য শিক্ষার্থী সংখ্যা ধরে রাখতে না পারে, তবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখা যাবে না।
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী

এ রকম আরেকটি বিদ্যালয় বেগম রূপবান উচ্চবিদ্যালয়। এটি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় অবস্থিত। এখান থেকে ১০ জন পরীক্ষা দিয়ে সবাই ফেল করেছে। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় অবস্থিত চরতেরোটেকিয়া মৌজা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ৯ জন পরীক্ষা দিয়েছিল।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। জবাব সন্তোষজনক না হলে পাঠদানের অনুমতি বাতিল করা হবে।

আরও পড়ুন

শূন্য পাস দুটি বিদ্যালয় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীন। এগুলো রাজশাহীর মোহনপুর ও নওগাঁর আত্রাইয়ে অবস্থিত। আর দিনাজপুর বোর্ডের অধীন চারটি শূন্য পাস প্রতিষ্ঠান গাইবান্ধা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুরে অবস্থিত।

শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। জবাব সন্তোষজনক না হলে পাঠদানের অনুমতি বাতিল করা হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার

শূন্য পাস মাদ্রাসা বেশি

যে ৪২টি মাদ্রাসা থেকে কেউ পাস করেনি, সেগুলোর সব কটিই ঢাকার বাইরে অবস্থিত। যেমন ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বীরকয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল মাত্র একজন। গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, মাদ্রাসাটির পাকা ভবনের কিছু অংশে টিনের চালা; আর কিছু অংশ ফাঁকা। মাঠে আবর্জনা। শ্রেণিকক্ষে ভাঙা কয়েকটি বেঞ্চ। মূলত প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব ধরে রাখা এবং সম্পদ রক্ষার জন্য কাগজে–কলমে টিকিয়ে রাখা হয়েছে।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চারটি মাদ্রাসা থেকে কেউ পাস করেনি। এগুলোর পরীক্ষার্থী ছিল ৮ থেকে ১৮ জনের মধ্যে।

২০০০ সালে শিক্ষা বোর্ড থেকে মাদ্রাসাটি পাঠদানের অনুমতি পায়। তবে একপর্যায়ে এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীরা অন্যত্র চলে যান। ওই এলাকার বীরকয়া নিম্নমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফাতুল্যা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি প্রতিষ্ঠানটির নাম ও অস্তিত্ব ধরে রেখেছেন। কিছু গরিব শিক্ষার্থীর যাবতীয় খরচ বহন করে পরীক্ষা দেওয়ানো হয়। প্রতিষ্ঠানের কিছু সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে সব বেহাত হবে।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চারটি মাদ্রাসা থেকে কেউ পাস করেনি। এগুলোর পরীক্ষার্থী ছিল ৮ থেকে ১৮ জনের মধ্যে।

যে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কেউ পাস করে না, সেগুলোর শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থী খুবই কম। এর কারণ হলো এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষকস্বল্পতাসহ বিভিন্ন সমস্যা আছে। তাই কয়েক বছরের ফলাফল পর্যালোচনা করে যদি দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলো ধারাবাহিকভাবে খারাপ করছে, তাহলে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়াই ভালো হবে
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক

৫০ শতাংশের ওপরে পাসের হার বেশি

ফলাফলের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১০৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাসের হার ১০ শতাংশের মধ্যে। ১৪৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১০ শতাংশের ওপর থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত এবং ২০ শতাংশের ওপর থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১ হাজার ৭৯৫টি। ৫০ শতাংশের ওপর থেকে ১০০ শতাংশের নিচে পাস করা প্রতিষ্ঠান ২৪ হাজার ৮০৪টি। আর ২ হাজার ৯৬৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সবাই পাস করেছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, যে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কেউ পাস করে না, সেগুলোর শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থী খুবই কম। এর কারণ হলো এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষকস্বল্পতাসহ বিভিন্ন সমস্যা আছে। তাই কয়েক বছরের ফলাফল পর্যালোচনা করে যদি দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলো ধারাবাহিকভাবে খারাপ করছে, তাহলে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়াই ভালো হবে বলে মনে করেন তিনি।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কামনাশীষ শেখর, টাঙ্গাইল, মামুনুর রশীদ, বাগমারা এ বি এম মিজানুর রহমান, বাউফল]

আওয়ামী লীগ ও জোটের নেতাদের চীনমুখী তৎপরতা বেড়েছে


আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের ৯ সদস্যের একটি দল চীনের কুংমিং পৌঁছেছেন। চীন, ১৩ মেছবি: সংগৃহীত

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও ১৪-দলীয় জোটের নেতাদের চীনমুখী তৎপরতা বেড়েছে। কয়েক বছর ধরেই চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে চীন সফর করছেন ক্ষমতাসীন জোটের নেতারা। তবে এবার তাঁদের চীন সফর বেড়েছে।

গতকাল সোমবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের ৯ সদস্যের একটি দল চীনে গেছে। এতে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারসহ শীর্ষ নেতারা রয়েছেন।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ২৫ মে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় নেতাদের ৫০ সদস্যের একটি বড় দল চীন সফরে যাবেন। এই দলটির নেতৃত্ব দেবেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি ও সংসদ সদস্য সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ তানভীর শাকিল জয়।

১৪ দলের বামপন্থী শরিকদের চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আগে থেকেই একধরনের যোগাযোগ ছিল। নেতাদের সফরও নিয়মিত হতো।

২৫ জুন আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের আরেকটি দলের চীন সফরের কথা রয়েছে। এই দলটির নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য গঠিত দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্যাহকে। এই দলটির সদস্যসংখ্যাও ১০ জনের মতো হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।

১৪ দলের বামপন্থী শরিকদের চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আগে থেকেই একধরনের যোগাযোগ ছিল। নেতাদের সফরও নিয়মিত হতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের সঙ্গেও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সখ্য বেড়েছে বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আগ্রহই বেশি। ২০১২ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে বহুবার চীন সফর করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে দলটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মন্ত্রী সং তাও এবং আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ সমঝোতা স্মারকে সই করেন। বাংলা, চায়নিজ ও ইংরেজি ভাষায় এই স্মারক সই করা হয়।

২০১৯ সালের ২১ মার্চ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। আওয়ামী লীগের আমন্ত্রণে সে সময় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে দলটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মন্ত্রী সং তাও এবং আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ সমঝোতা স্মারকে সই করেন। বাংলা, চায়নিজ ও ইংরেজি ভাষায় এই স্মারক সই করা হয়।

এতে বলা হয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, সমঅধিকার, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ের হস্তক্ষেপ না করার ভিত্তিতে দুই বন্ধুপ্রতিম দল পারস্পরিক বিনিময় ও সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দলীয় সম্পর্ক এবং ‘চীন-বাংলাদেশ কৌশলগত সহায়তা ও অংশীদারত্ব’ আরও জোরদার করার লক্ষ্যে কাজ করবে। দুই সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট আলোচনা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে যোগাযোগ ও সহায়তা জোরদার করারও কথা বলা হয়।

২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর প্রয়াত সদস্য আবদুল মতিন খসরুর নেতৃত্বে ২০ সদস্যের দল চীন সফর করে। এতে কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন।

আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এই অঞ্চলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতীয় কংগ্রেসের সম্পর্ক প্রাচীন। এই সম্পর্ক এখনো অটুট। সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষমতাসীন বিজেপির সঙ্গেও যোগাযোগ বেড়েছে। তাদের আমন্ত্রণে বেশ কয়েকবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সফর করেছেন। সরকারিভাবেও সফর বিনিময় হয় নিয়মিত। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যোগাযোগটা সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক বেড়েছে।

ছাত্র-যুব নেতাদের সফর

২৪ মে ৫০ সদস্যের দলটি যাচ্ছে চীনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ঝেজিয়াংয়ে। এর সদস্যরা মূলত ছাত্র ও যুবনেতা। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি তাদের আমন্ত্রণপত্রে ছাত্র, যুব ও নারী নেতাদের প্রশিক্ষণের কথা বলেছে। এই জন্য এই দলের সদস্যদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের তথ্যভান্ডার তৈরিতে যুক্ত ওয়েব টিমের সদস্যরাও থাকবেন। এঁরাও ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। এই দলটির নেতৃত্ব দেবেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি ও সংসদ সদস্য সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ তানভীর শাকিল জয়।

তানভীর শাকিল জয় প্রথম আলোকে বলেন, মূলত আওয়ামী লীগ ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সংস্কৃতির আদান-প্রদান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ই মূল লক্ষ্য। সফরে কমিউনিস্ট পার্টির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, এরপর ২৫ জুন কাজী জাফর উল্যাহর নেতৃত্বে যে দলটি যাবে, সেটিতে কেন্দ্রীয় নেতারাই থাকবেন। এই দলটির সদস্যসংখ্যাও ১০ জনের মতো হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।

গত বছর ২২ মে এবং ৮ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বিমানমন্ত্রী ফারুক খানের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা দুবার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে সে দেশ সফর করেন। ফারুক খান এর আগেও আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়ে চীন সফর করেছেন।

২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর প্রয়াত সদস্য আবদুল মতিন খসরুর নেতৃত্বে ২০ সদস্যের দল চীন সফর করে। এতে কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন।

চীনা কমিউনিস্ট পার্টি আওয়ামী লীগের দাপ্তরিক কাজের জন্য কম্পিউটারসহ নানা সামগ্রী উপহারও দিয়েছে।

১৪ দলের শরিকদের সফর

গতকাল দুপুরের পর চীন সফরে গেল জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দলের ৯ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল। তাদের গন্তব্যস্থল চীনের কুংমিং প্রদেশ।

এই দলে আছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, জাসদের কার্যকরী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম, জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহম্মদ মোহসীন, ওয়ার্কার্স পার্টির নারী নেত্রী লুৎফুন্নেছা খান, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য মোস্তফা লুৎফুল্লাহ, সাম্যবাদী দলের নেতা তৃপ্তি বড়ুয়া, হ মোশায়হিদ প্রমুখ। বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রতিনিধিদলকে বিদায় জানান।

সফরকালে ১৪-দলীয় জোটের তিন শরিক দলের নেতারা কুংমিংয়ে ইউনান একাডেমি অব অ্যাগ্রিকালচার সায়েন্স একাডেমি, কেপিসি ফার্মাসিউটিক্যালস পরিদর্শন করবেন। সফরকালে তাঁরা চীনের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের বৈঠক হতে পারে। এমনকি সফরকালে নেতাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এর আগে গত বছর জুলাইয়ে ১৪ দলের বামপন্থী শরিকদের শীর্ষ নেতারা চীন সফর করেন।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ১৪ দলের শরিকেরা দীর্ঘদিন ধরে জোটের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক চেয়ে আসছিলেন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকের জন্য ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশনাও দিয়েছেন। কিন্তু শরিক দলের নেতাদের চীন সফরের কারণে বৈঠকটি কয়েক দিন পেছাতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।


Sunday, May 12, 2024

শহীদ মিনারে আকবর খান রনোর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন বেলা সাড়ে ১১টায়


 

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা হায়দার আকবর খান রনোর জানাজা ও দাফন হবে আজ সোমবার। এর আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। সর্বস্তরের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁর মরদেহ রাখা হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।

সিপিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা হয়, আজ সকাল ১০ টায় হায়দার আকবর খান রনোর মরদেহ প্রথমে রাজধানীর পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তিভবনে আনা হবে। সেখানে দলের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।

মুক্তিভবনে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শোক র‍্যালি নিয়ে আকবর খান রনোর মরদেহ নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে বেলা সাড়ে ১১ টায় তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। এরপর সেখানে সর্বস্তরের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁর মরদেহ রাখা হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হায়দার আকবর খান রনোর জানাজা বেলা দেড়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে তাঁকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

হায়দার আকবর খান রনোর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আজ দেশব্যাপী শোক পালন করবে সিপিবি। এর অংশ হিসেবে তাদের দলীয় কার্যালয়গুলোতে কালো পতাকা উত্তোলন ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হবে। পাশাপাশি আকবর খান রনোর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।

গত শুক্রবার দিবাগত রাত ২টায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক হায়দার আকবর খান রনো। তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও নেতা। একাধিক বইয়ের লেখক তিনি।

২০১০ সালে মতভিন্নতার কারণে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ছেড়ে হায়দার আকবর খান সিপিবিতে যোগ দেন। ২০১২ সালে তাঁকে সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। এরপর তিনি দলটির উপদেষ্টা হন।

হায়দার আকবর খান রনো ১৯৪২ সালের ৩১ আগস্ট অবিভক্ত ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস নড়াইলের বরাশুলা গ্রামে।