ভিয়েতনামের বাসিন্দাদের কাছে ডং তাও মুরগি খুবই জনপ্রিয়। এই মুরগি তার শারীরিক বৈশিষ্ট্যের জন্য ‘ড্রাগন চিকেন’ নামে বেশি পরিচিত। ডং তাও মুরগিকে ভিয়েতনামে মর্যাদার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। এই মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার সেখানে ভীষণ জনপ্রিয়। এই মুরগি দেখতে অন্যান্য মুরগির চেয়ে আলাদা। সাধারণত একটি পূর্ণবয়স্ক তাও মুরগির দাম প্রায় আড়াই হাজার ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় তা প্রায় ৩ লাখ টাকার সমান। কখনো কখনো আরও বেশি দামে বিক্রি হয় এই মুরগি। বিরল প্রজাতি আর ধীরগতির বংশবৃদ্ধির কারণেও এই মুরগির দাম এত বেশি।
ড্রাগন মুরগির পায়ে প্রচুর মাংস থাকে বলে এরা অন্য প্রজাতির মুরগির চেয়ে আলাদা। ড্রাগন চিকেনের পায়ের মাংস দিয়ে তৈরি করা হয় ভিয়েতনামি নানা ঐতিহ্যবাহী পদ। এই মাংসকে সুস্বাদু করতে শেফরা অত্যন্ত ধীরে ধীরে রান্না করেন। চান্দ্র নববর্ষের ছুটিতে এই মুরগি দিয়ে ঘরে ঘরে তৈরি হয় নানা পদ। এই মুরগির পায়ের মাংস আঁশযুক্ত লাল বর্ণের। বেশ সংবেদনশীল। চান্দ্র নববর্ষের সময় উপহার হিসেবেও চাহিদার তুঙ্গে থাকে বিরল ও বিপন্ন জাতের এই মুরগি। সাম্প্রতিক সময়ে এই মুরগির বিভিন্ন রেসিপি বিদেশিদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এই মুরগির তৈরি নানা পদ খেতে ভিয়েতনামে ছুটে আসছেন তাঁরা।
কয়েক শতাব্দী ধরেই ভিয়েতনামে দারুণ জনপ্রিয় এই মুরগি। একসময় শুধু রাজপরিবারের সদস্যরাই এই মুরগি খেতেন। এই মুরগিকে রাজার সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বিশ্বাস করা হতো।
ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ের ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ডং তাও মুরগি পাওয়া যায়। হুং ইয়েন প্রদেশের খোয়াই চাউ অঞ্চলের এই গ্রামেই জাতটির উৎপত্তি। পরিণত অবস্থায় ডং তাও জাতের একেকটি মুরগির ওজন ছয় কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে, যার একটি বড় অংশই থাকে পায়ে। এই মুরগি দিয়ে তৈরি আলোচিত রেসিপির মধ্যে অন্যতম চিকেন স্টিমড উইথ হার্বস (স্থানীয়ভাবে গা ডং তাও হ্যাপ লা চান), চিকেন ব্রেইজড ইন সয়া সস (গা ডং তাও খো জি দাও), চিকেন উইথ লেমনগ্রাস অ্যান্ড চিলি (গা ডং তাও জাও সা অট) ইত্যাদি।
ভিয়েতনামের মুরগির খামারি নুগুয়েন থি হং নুং বলেন, ‘এই মুরগির সবচেয়ে মূল্যবান অংশ হলো এর পা। মুরগির বয়স যখন ১৩ থেকে ১৫ মাস হয়, তখন সবচেয়ে ভালো স্বাদের মাংস পাওয়া যায়। সহজে ভাপ দিয়ে এই মুরগি রান্না করা যায়। এখন ডং তাও মুরগির চাহিদা অনেক। স্বতন্ত্র সুগন্ধ ও দারুণ স্বাদের জন্য এই মুরগির চাহিদা বাড়ছে। খামারিরা ভালো মানের চাল ও ভুট্টা খাওয়ানোর মাধ্যমে এই মুরগি পালন করেন। এই মুরগির চাহিদা যত, উৎপাদন সেই হিসাবে বেশি নয়। তাই এখনো ভিয়েতনামের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে পারছেন না খামারীরা।
0 Comments